বন্ধন-বার্তা: এই রাখি পাড়ি দিচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
ইছামতীর কচুরিপানা দিয়ে তৈরি রাখি এ বার পাড়ি দিচ্ছে আমেরিকা, জার্মানি, কানাডায়। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, রাখি কয়েক দিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে। একই সঙ্গে রাখি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে।
পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাখি কুরিয়র করা হয়েছে। দিল্লিতে ওই সব দেশের দূতাবাসে রাখি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সকলকে ২০টি করে রাখি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির কাছেও রাখি পাঠানো হয়েছে।’’ পুরপ্রধানের কথায়, ‘‘ওই সব দেশে আমরা কচুরিপানা থেকে তৈরি সামগ্রীর ব্যবসা করতে চাই। ভাল বাজার তৈরির সম্ভাবনা আছে। সৌজন্য হিসেবে কিছু রাখি পাঠানো হয়েছে।’’
দিন কয়েক আগে পুরসভার পক্ষ থেকে নদী থেকে কচুরিপানা তুলে মহিলাদের হস্তশিল্পের সামগ্রী তৈরি করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। পুরসভা সূত্রে, জানানো হয়েছে, ৫০০ মহিলাকে এ বিষয়ে কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কর্মশালার নাম ছিল, ‘কচুরিপানা আনবে সোনা।’ মহিলারা প্রশিক্ষণ নিয়ে কচুরিপানার ব্যাগ, ফাইল, টুপি, রাখি-সহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা শিখে ফেলেছেন।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, মহিলারা কচুরিপানা দিয়ে ৩০ হাজার রাখি তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে ১৩ হাজার রাখি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। একটি রাখির দাম ১৫ টাকা। পুরসভা দেশ-বিদেশে কচুরিপানার সামগ্রী বিপণনের পরিকল্পনা করেছে। এর ফলে মহিলারা আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হতে পারবেন।
পুরপ্রধান জানান, রাখি তৈরি করেছেন ১০০ জন মহিলা। সকলে ৭-১০ হাজার টাকা আয় করেছেন। রাখি পূর্ণিমার দিন সকলের হাতে চেক তুলে দেওয়া হবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, মহিলারা নিজেরাই নদী থেকে কচুরিপানা তুলে আনবেন। সেই কচুরিপানা পুরসভা কিনে নেবে। কেজি প্রতি দাম দেওয়া হবে ৬৫ টাকা। ওই কচুরিপানা শুকিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া মহিলাদের হাতে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হবে। মহিলারা হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী বাড়ি বসে তৈরি করবেন। পুরসভা সেই সামগ্রী আবার মহিলাদের কাছ থেকে কিনে নেবে। বিনিময়ে টাকা দেওয়া হবে কারিগরদের। পুরসভা তা বিক্রির ব্যবস্থা করবে।
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘কচুরিপানা দিয়ে তৈরি সামগ্রীর বিপুল চাহিদা রয়েছে। ইতিমধ্যেই সরকারি বা বেসরকারি দফতর প্রতিষ্ঠান থেকে বরাদ আসতে শুরু করেছে।’’
ঘরে বসে রোজগারের সুযোগ করে দেওয়ায় পুর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মহিলারা। কচুরিপানা থেকে শিল্পসামগ্রী তৈরি হলে নদীও কিছুটা সাফ হবে বলে মনে করছেন বনগাঁর বাসিন্দারা।