অবরোধের জেরে আটকে ট্রেন। বৃহস্পতিবার সকালে ডায়মন্ড হারবার স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র
২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই আবারও রেল অবরোধ ডায়মন্ড হারবারে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ নিত্যযাত্রীদের একাংশ ডায়মন্ড হারবার স্টেশনে অবরোধ শুরু করেন। এই অবরোধের জেরে ফের ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করেন অনেকেই। যদিও সাড়ে ১০টা নাগাদ জিআরপি থানার পুলিশ অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে অবরোধ উঠে যায়। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে ট্রেন পরিষেবা।
পুষ্পেন্দু মণ্ডল নামের এক অবরোধকারী জানান, একের পর এক রেল দুর্ঘটনা এবং দেরিতে ট্রেন চলার প্রতিবাদে তাঁরা বৃহস্পতিবার সকালে ‘প্রতীকী অবরোধ’ করেছেন। তাঁর কথায়, “একের পর এক রেল দুর্ঘটনা হচ্ছে। মানুষ এখন ট্রেনে উঠতে ভয় পায়। অন্য দিকে, দেরিতে ট্রেন চলায় পথেঘাটে বেরিয়ে সমস্যার মুখে পড়ছেন যাত্রীরা। তাই আমাদের এই প্রতীকী প্রতিবাদ।”
বৃহস্পতিবারের অবরোধের পরেই রেলের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, কোনও রকম যৌক্তিক কারণ ছাড়াই কিছু মানুষ সকালের ব্যস্ত সময়ে ট্রেন অবরোধ করছেন। এর ফলে অন্য যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে। রেলের দাবি, ট্রেন দেরিতে চলছে না। সব ট্রেনই নির্ধারিত সময় মেনে চলছে।
প্রসঙ্গত, বুধবারও নিত্যযাত্রীদের একাংশ ডায়মন্ড হারবার স্টেশনে রেল অবরোধ শুরু করেছিলেন। অবরোধকারীদের বক্তব্য ছিল, নির্ধারিত সময়ের থেকে অনেক দেরিতে চলছে ট্রেন। এর ফলে অফিস বা গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। স্টেশন কর্তৃপক্ষকে বার বার অসুবিধার কথা জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বুধবার ডায়মন্ড হারবার ছাড়াও শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার শাখার নেত্রা এবং মগরাহাট স্টেশনেও অবরোধ করেন যাত্রীরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেল আধিকারিকেরা। সঙ্গে ছিলেন জিআরপি আধিকারিকেরাও। বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে আসে ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ। দফায় দফায় অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে তারা। যদিও বিক্ষোভকারীদের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, দাবি না মানলে অবরোধ তোলার কোনও প্রশ্নই নেই। লিখিত আশ্বাস পেলে অবরোধ তুলবেন তাঁরা, দাবি ছিল তেমন। অনেক বোঝানোর পর সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অবরোধ তোলেন যাত্রীরা। কিন্তু দেখা গেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানেই ফের রেল অবরোধ করলেন যাত্রীরা।
বুধবারের অবরোধ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র অবরোধকারীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের জন্য অনেক মানুষ বিপদে পড়ছেন। যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তবে তা নির্দিষ্ট ফোরামে জানান। রেল কখনই দেরিতে ট্রেন চালাতে চায় না। রেলের ট্র্যাক পরিষ্কার থাকলে পরিষেবা স্বাভাবিক গতিতেই চলতে পারে। কিন্তু যত ক্ষণ পর্যন্ত না রেলগেটগুলি সঠিক সময়ে বন্ধ করতে পারছি, তত ক্ষণ ট্রেন আটকে পড়ছে। যার ফলে অন্যান্য ট্রেনও দাঁড়িয়ে পড়ে।’’
বুধবার অবরোধের জেরে ভোর থেকেই ওই লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। রেল সূত্রে জানা যায়, অবরোধের কারণে ওই লাইনে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। ডাউন লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে একের পর ট্রেন। ফলে সকালের দিকে শিয়ালদহ থেকে কোনও ডায়মন্ড হারবার লোকাল ছাড়া সম্ভব হয়নি। বাতিল হয় একের পর এক লোকাল ট্রেন। বৃহস্পতিবারও অবশ্য তাড়াতাড়ি অবরোধ উঠে যাওয়ায় বুধবারের মতো ভোগান্তি হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।