হামলা: পুলিশ এখানে পৌঁছতেই ছুটে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। নিজস্ব চিত্র
দলে আট জন। চার জনের কাছে অস্ত্র থাকার কথা। বাকি চার জনের ভরসা খুব জোর একটা লাঠি। এই পরিস্থিতিতে সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশদের নিয়ে কেন চার পুলিশ কর্মী শুক্রবার রাত ১১টায় দাগি দুষ্কৃতী কেদারকে ধরতে গ্রামে ঢুকল, সে প্রশ্ন ঘুরছে অনেকেরই মনে। পুলিশ কর্তাদেরও কারও কারও বক্তব্য, কেদার-বাহিনীর নাম শুনলে এলাকার মানুষ ভয়ে কাঁপেন, থানায় নালিশ পর্যন্ত জানাতে চান না। এমন লোকের সঙ্গে টক্কর দিতে গেলে আরও প্রস্তুতি দরকার ছিল। রাতের অন্ধকারে গ্রামে ঢুকে পড়াটা অতিরিক্ত সাহসী পদক্ষেপ হলেও বিচক্ষণতা কম ছিল বলেই মনে করছেন দফতরের প্রবীণ অফিসারেরা।
ইতিমধ্যে পুলিশ জানতে পেরেছে, কেদার ও তার সাগরেদরা বৌঠাকুরানি গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালীন হামলা চালায়। সেখানে গুলি-বোমা ছোড়ে শুক্রবার রাতে ১০টা নাগাদ। দু’জন গুরুতর জখম হন সেই হামলায়।
‘অ্যাকশন’ চালিয়ে নিজের ডেরা খুলনার পোলপাড়ায় ফেরে কেদার। মদ খায়, জুয়া খেলতে বসে যায়। রাত তখন ১১টা। নদীর পাড়ে সুনসান ইটের রাস্তা দিয়ে পোলপাড়ার দিকে এগোচ্ছিল পুলিশের ৪টি মোটর বাইক। শব্দ শুনে বেরিয়ে আসে কেদাররা। সন্দেশখালি থানার এসআই অরিন্দম হালদার যখন বিশ্বজিৎকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন, সে সময়ে অন্ধকারের মধ্যে কেদার চিৎকার করে বলে, আর এগোলে গুলি চালিয়ে দেবে। হুমকির মুখেও এগিয়ে যাচ্ছিলেন বিশ্বজিৎরা। সে সময়েই একের পর এক গুলি উড়ে আসতে থাকে অন্ধকার ফুঁড়ে।
গ্রামের মানুষের প্রশ্ন, কেদারের বিরুদ্ধে পুলিশ এত দিন কেন চোখ-কান বুজে ছিল। অপারেশন চালানোর সময়ে কেন আরও বড় বাহিনী এল না, সে প্রশ্নও উঠছে।
সবে মাত্র গত বছরই ভিলেজ পুলিশের চাকরি পেয়েছিলেন বিশ্বজিৎ মাইতি। নরম স্বভাবের ছেলেটির কাজেও খুশি ছিলেন দফতরের কর্তারাও। কিন্তু দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ গেল বছর আঠাশের যুবকের।
খুলনার ঢোলখালি গ্রামে বাড়ি বিশ্বজিৎদের। বাবা গৌর এবং মা প্রতিমার দুই সন্তান অভিজিৎ ও বিশ্বজিৎ। কেন অত রাতে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হল বিশ্বজিৎকে, সে প্রশ্ন তুলছেন পাড়া-পড়শিরা। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বসিরহাট পুলিশ জেলার এক আধিকারিক।
শুক্রবার রাতে ঘটনার সময়ে বিশ্বজিতের বাইকের পিছনে বসেছিলেন পুলিশ অফিসার অরিন্দম হালদার। অভিযোগ, কেদার-বাহিনী হামলা চালায় তাঁদের উপরে। একাধিক গুলি লাগে বিশ্বজিতের পেটে। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পাঠানো হয় কলকাতার আএম বাইপাসের ধারের একটি নার্সিংহোমে। শনিবার সেখানেই মারা গিয়েছেন ওই যুবক। প্রতিমা বলেন, ‘‘শুনেছি, গুলি লেগে নাকি নদীর ধারে পড়ে গিয়েছিল ও। অন্ধকারে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। সংসারটা তছনছ হয়ে গেল।’’