Strike

জনজীবনে হোঁচট

বারুইপুর আরপিএফের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও বোমা পাওয়া যায়নি। যা পাওয়া গিয়েছে, তা সুতলির পাক দেওয়া মন্ড। পরে বম্ব স্কোয়াডকে খবর দেওয়া হয়েছিল।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫১
Share:

বসিরহাট পুরসভার কাছে ধর্মঘটীরা।

বসিরহাটে বচসা, টায়ারে আগুন

Advertisement

সকাল ৮টা নাগাদ বাম, কংগ্রেস সমর্থকেরা বসিরহাটের ভ্যাবলা স্টেশনে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ চলার পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। বিক্ষোভকারীরা বসিরহাট ত্রিমোহণী এলাকায় বাইক রেখে পথ আটকায়। টায়ারে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বসিরহাটের রেজিস্ট্রি অফিসের কাছে জোর করে দোকান বন্ধ করতে গেলে দোকানির সাথে ঝগড়া বাধে আন্দোলনকারীদের। বসিরহাট পুরসভার মূল গেট আটকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া সরকারি প্রকল্পের ব্যানারের পাশে সিপিএম এবং কংগ্রেসের পতাকা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পুরপ্রধান তপন সরকার পতাকা খুলতে বলায় বন্‌ধ সমর্থকদের সঙ্গে বচসা বাধে। বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাটে রাস্তা অবরোধ করে গাড়ি থেকে জোর করে লোক নামিয়ে দেওয়ার উত্তেজনা বাড়ছিল। জোর করে গাড়ি বন্ধ করতে গেলে চালক রতন বৈদ্য বলেন, ‘‘সব বন্ধ করে কী হবে। আমাদের তো সেই বেশি দাম দিয়েই সব কিনে খেতে হবে। এক দিন কাজ না করলে ভাত জোটে না। গাড়ি চালাতে দিন, নয় তো একটা হাঙ্গামা হয়ে যাবে।’’ চালকের কথার উত্তর দিতে পারেননি বন্‌ধ সমর্থকেরা। সরে দাঁড়ান তাঁরা। দুপুরের দিকে পুলিশ দু’জন বন্‌ধ সমর্থককে আটক করলে উভয়পক্ষের মধ্যে বচসা, ধাক্কাধাক্কি বাধে। পুলিশ লাঠি চালায়। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদ করে বাদুড়িয়ার বিধায়ক তথা কংগ্রেস নেতা কাজি আব্দুর রহিম দিলু বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ অন্যায় ভাবে লাঠি চালিয়েছে।’’ ন্যাজাট রোডের উপরে পিঁফার মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন বাম-কংগ্রেস সমর্থকেরা। টাকি, হাসনাবাদেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। মিনাখাঁয় বন্‌ধ সমর্থকেরা গাড়ি ও ট্রাকের চাকার হাওয়া খুলে দেওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। স্বরূপনগর, হাড়োয়া, সন্দেশখালিতে বন্‌ধের জেরে বেসরকারি বাস তেমন চোখে পড়েনি। সরকারি বাসে যাত্রী ছিল কম। অধিকাংশ দোকান-বাজার বন্ধ ছিল।

Advertisement

পথে জমি কমিটি

ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড এলাকায় বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল, রাস্তা অবরোধ করে জমি কমিটি। ভাঙড়ের শ্যামনগর মোড়, পদ্মপুকুর মোড়, ঢিবঢিবা বাজারে দীর্ঘক্ষণ হাড়োয়া-লাউহাটি রোড অবরোধ করা হয়। পাওয়ার গ্রিড-সংলগ্ন নতুনহাট, পদ্মপুকুর, ঢিবঢিবা, শ্যামনগর-সহ আশপাশের এলাকায় বাজার, দোকান সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। পুলিশ শ্যামনগর মোড়ে রাস্তা অবরোধ তুলতে গেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গন্ডগোল বেধে যায়। পুলিশের দিকে বাঁশ, লাঠি নিয়ে তেড়ে যেতে দেখা যায় কিছু আন্দোলনকারীকে। পাল্টা পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গেলে তারা পিছু হটে। শ্যামনগর মোড়ে পথসভা করেন জমি কমিটির নেতা অলীক চক্রবর্তী। ভাঙড়ের বামনঘাটা, জলপথে বাসন্তী হাইওয়ের উপরে বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল করে সিপিএম। ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার, প্রাণগঞ্জ বাজার, ঘটকপুকুর বাজারে বাজার, দোকান খোলা ছিল। স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিসে হাজিরা স্বাভাবিক ছিল। তবে রাস্তায় বাস ছিল কম।

বম্ব স্কোয়াড কোথায়

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার দক্ষিণ বারাসত স্টেশন থেকে একশো মিটার দূরে আপ লাইনে পাশে ৪টি বোমা মেলে। রেল পুলিশের অবশ্য দাবি, সেগুলি সুতলির গোলা। যদিও এর জেরে দক্ষিণ বারাসত স্টেশনে আপ এবং ডাউন ট্রেন আটকে পড়ে। যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। খবর দেওয়া হয় আরপিএফকে। বারুইপুর জিআরপির কাছেও খবর পৌঁছয়। পুলিশ আধিকারিকের সামনেই এক স্থানীয় বাসিন্দা ঘটনাস্থল থেকে বোমা উদ্ধার করে বালতির জলে চুবিয়ে তা নিষ্ক্রিয় করেন।

এই ঘটনায় রেল পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেন বম্ব স্কোয়াডকে ডাকা হল না, বম্ব স্কোয়াডের সাহায্য ছাড়াই কী ভাবে রেল পুলিশের সামনে এক জন নাগরিক হাতে করে বোমা তুলে বালতিতে রাখলেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। বড়সড় বিপদ ঘটতে পারত বলেও তাঁদের বক্তব্য।

বারুইপুর আরপিএফের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও বোমা পাওয়া যায়নি। যা পাওয়া গিয়েছে, তা সুতলির পাক দেওয়া মন্ড। পরে বম্ব স্কোয়াডকে খবর দেওয়া হয়েছিল।’’ কিন্তু যখন ওই সুতলির গোলা তোলা হচ্ছে, তখনও তা বোমা বলেই জানা গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও কেন এই সিদ্ধান্ত, উত্তর নেই পুলিশ আধিকারিকদের মুখে।

পথঘাট সুনসান

ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপ মহকুমায় বেশ কিছু দোকানপাট বন্ধ ছিল। সরকারি বাস চলাচল করলেও বেসরকারি বাস ছিল কম। বেলা যত গড়িয়েছে, রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়েছে। দুপুরের দিকে প্রায় ফাঁকাই যাতায়াত করেছে বাস, ট্রেন। সকাল থেকে ডায়মন্ড হারবার থেকে শিয়ালদহ এবং নামখানা থেকে শিয়ালদহগামী ট্রেনগুলি কয়েকটি স্টেশনে সাময়িক অবরোধে অনিয়মিত ভাবে চলেছে। সরকারি অফিসের কর্মীরা অনেকে রাতে থেকে গিয়েছিলেন অফিসেই। মন্দিরবাজারের বিডিও সঈদ আহমেদ বলেন, ‘‘২৫ জন কর্মীর বাড়ি দূরে হওয়ায় রাতে অফিসে থেকে গিয়েছিলেন। আমরা সকলে মিলে রাতের খাবার খেয়েছি।’’

সুন্দরবনে ভিড় পর্যটকদের

বাসন্তী, গোসাবা এলাকায় যান চলাচল, ফেরি যোগাযোগ স্বাভাবিকই ছিল। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনের গৌড়দহ ও ঘুটিয়ারিশরিফ স্টেশনের মাঝে ভোর ৪টে নাগাদ ট্রেনের ওভারহেডের তারে কলাপাতা ফেলে ট্রেন আটকানোর চেষ্টা হয়। যদিও তার জেরে খুব একটা সমস্যা হয়নি। সকালের দিকে ট্রেন একটু দেরিতে চললেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। ক্যানিং শহরে সাধারণ ধর্মঘটের তেমন প্রভাব পড়েনি। বামেদের মিছিল করতেও দেখা যায়নি। তবে বাসন্তীর ভাঙনখালি এলাকায় বাসন্তী রোড অবরোধ করে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখায় বামেরা। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়। সুন্দরবন এলাকায় মোটের উপরে সব কিছু স্বাভাবিকই ছিল। স্কুল-কলেজ খুলেছে। পড়ুয়া ও শিক্ষকদের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের মতোই ছিল। পর্যটকদের ভিড়ও দেখা গিয়েছে সুন্দরবনের নানা প্রান্তে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement