জোড়া-তাপ্পি: ভাঙাচোরা মাটির ঘরের সামনে বসে চম্পা সর্দার। নিজস্ব চিত্র
বাড়ি বলতে কেউ থাকেন একটা ত্রিপল ঘেরা কুঁড়ে ঘরে। কেউ আবার বাচ্চাদের নিয়ে প্রবল শীতে মাথা গুঁজে আছেন দরমা, ত্রিপলঘেরা ঘরে। কারও বাড়ি বলতে হেলে যাওয়া মাটির দেওয়াল আর টালির চাল।
এবারও আবাস যোজনার তালিকায় এমন বহু পরিবারের জায়গা হল না। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিশপুর পঞ্চায়েত এলাকায় অনেক জায়গা থেকে উঠে আসছে এমন অভিযোগের কথা।
বিশপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জিত জানার বুথের বাসিন্দা রঞ্জিত ঢালি। বাড়ি বলতে চারদিকে ত্রিপলঘেরা একটি ঝুপড়ি। খড়ের ছাউনি ছিল এক সময়ে। এখন চাল থেকে জল পড়া আটকাতে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা হয়েছে। এখানে থাকেন রঞ্জিত, তাঁর স্ত্রী বন্দনা ও দুই ছেলেমেয়ে। বন্দনা জানান, মাটির ঘর করারও ক্ষমতা নেই। স্বামী শ্রমিকের কাজ করেন। তা-ও গ্রামে সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশি কাজ মেলে না। মাত্র ৫ কাঠা জমি। সেখানে মাছের চাষ করে কোনও রকমে সংসার চলে।
বন্দনার কথায়, ‘‘আমপানে খড়ের চাল ভেঙে গিয়েছিল। সেই থেকে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা চাল। এ ভাবে থাকতে সমস্যা হয়। ঘরে দিনের আলো ঢোকে না। যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে ঘর। বৃষ্টি হলে জল ভর্তি হয়ে যায় ঘরে।” তাঁর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, এবার ঘরের তালিকায় নাম থাকবে। সেটা হল না।’’
এই পঞ্চায়েতের ৮৭ নম্বর বুথের বাসিন্দা বুদ্ধদেব সর্দার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজে গিয়েছেন। বাড়ি দরমার বেড়া দেওয়া, ত্রিপল দিয়ে ঘেরা। অ্যাসবেস্টসের ছাউনি। সব মিলিয়ে জরাজীর্ণ অবস্থা। মেয়ে-জামাই আছেন এখন বাড়িতে। মেয়ে নিবেদিতা বলেন, “বাচ্চাকে নিয়ে দরমা্র বেড়ার ঘরে শীতে খুবই কষ্ট পাচ্ছি। তাই ত্রিপলে ঘিরে রেখেছি। কিন্তু তাতেও শীত আটকায় না। বৃষ্টি হলে ঘরে জল ঢোকে।” নিবেদিতা আরও বলেন, ‘‘গ্রামে অনেকে বার বার ঘর পাচ্ছেন। আর আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে একটা ত্রিপলই শুধু পাই। সরকার ঘর দেবে, এই আশায় ছিলেন বাবা। কিন্তু তেমন কিছু হচ্ছে না।’’ গ্রামে কোনও কাজ না থাকায় বাবারা ভিন্ রাজ্যে গিয়েছেন বলে জানান নিবেদিতা।
এই বুথের বাসিন্দা শম্ভু সর্দারের বাড়িও ত্রিপল দিয়ে ঘেরা। অ্যাসবেস্টসের ছাউনি। ঝুপড়ির মধ্যে থাকেন শম্ভু, তাঁর স্ত্রী চম্পা ও ছেলে। চম্পা বলেন, “পাকা বাড়ি না থাকায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কে আর আমাদের কথা শুনবে!’’ আর আমাদেরও ক্ষমতা নেই ঘর তৈরি করার।”
বায়লানি খেয়াঘাটে নদীর বাঁধের পাশে বাড়ি গোপাল পাত্রের। তিনি বলেন, “একটা সংগঠন এক বছর আগে দরমার বেড়া দেওয়া ঘর করে দিয়েছিল। শীতে বা বর্ষায় নদীর পাশে এই ঘরে বাচ্চাদের নিয়ে থাকতে খুব সমস্যা হয়। তবুও সরকারি ঘর পেলাম না।”
বায়লানি গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা আরতি মণ্ডল হেলে পড়া এক চিলতে মাটির ঘরে থাকেন। অর্ধেক চালে ত্রিপল, অর্ধেক টালি দেওয়া। আরতির নামও নেই ঘরের তালিকায়।
একই অবস্থা এই পঞ্চায়েতের বায়লানির শিবু সর্দার, বিশপুর বসন্তপাড়ার বাসিন্দা সমরেশ বসন্ত, রামকৃষ্ণ পাত্র-সহ অনেকের। বিশপুরের সিপিএম নেতা অতনু মণ্ডল বলেন, “আবাস যোজনাটাও শাসকদল বিক্রির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। যে যেমন টাকা দিয়েছে, তার নাম তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। তাই যোগ্য ব্যক্তিরা বাদ গিয়েছেন অযোগ্যদের ভিড়ে।”
প্রধান সঞ্জিত জানা অবশ্য বলেন, “সমীক্ষা যাঁরা করেছেন, তাঁদের এই দায় নিতে হবে। সমীক্ষা আমরা করিনি। তবে আমরাও চাই অযোগ্য যাঁরা আছে, তাঁদের নাম বাদ যাক। যোগ্যদের নাম উঠুক।”
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, ‘‘সমীক্ষা ২০১৮ সালে হয়েছিল। এখন নাম নতুন করে তোলার সুযোগ নেই। উপরমহল থেকে নতুন করে নাম যুক্ত করার নির্দেশ দিলে যোগ্যরা যাতে বাড়ি পান, তা দেখা হবে।”