পুড়ে যাওয়া তৃণমূলের কার্যালয়। ছবি: নবেন্দু ঘোষ
ভোটের ঢাকে কাঠি পড়েছে। দক্ষিণের পরে বিক্ষিপ্ত ভাবে রাজনৈতির অশান্তি শুরু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনাতেও। শনিবার তার সাক্ষী থাকল সন্দেশখালি এবং দত্তপুকুর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সন্দেশখালির ন্যাজাটের শেয়ারা-রাধানগর পঞ্চায়েতের নিত্যবেড়িয়া গ্রামের বিমল সর্দার নামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়ির সামনে বোমাবাজি হয় শনিবার রাত ১২টা নাগাদ। রবিবার সকালে বাড়ির পাশে বোমের সুতলি পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিমলের অভিযোগ, ‘‘আমার স্ত্রী পঞ্চায়েতের ১২৯ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী হবেন। সোমবার ওঁর মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা। ভয় দেখাতেই বোমাবাজি করেছে দুষ্কৃতীরা।’’ সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের অভিযোগ, ‘‘প্রার্থী ও তাঁর পরিবারকে ভয় দেখাতে এবং এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে বোমাবাজি করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।’’ ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই বলে দাবি দলের স্থানীয় নেতৃত্বের।
এসডিপিও (মিনাখাঁ) আমিনুল ইসলাম খান জানান, কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। পড়লে খতিয়ে দেখা হবে।
এই ঘটনার আগে শনিবার বিকেলে সন্দেশখালি ২ ব্লক কার্যালয়ে সর্বদল বৈঠকে যোগ দিয়ে যাওয়ার পথে ওই ব্লকের সিপিএম এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুভাষ সর্দারকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল নেতা শিবুপ্রসাদ হাজরা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বিডিও অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও সন্দেশখালি থানার ওসি অনিমেষ দাঁ। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় সুভাষকে। সিপিএম নেতা নিরাপদ সর্দারের দাবি, ‘‘সুভাষের থেকে ফোন ও কিছু কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত সেগুলি পুলিশ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি। ই-মেল করে বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপারকে জানানো হয়েছে। সন্দেশখালি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।’’
প্রতিক্রিয়া জানতে শিবুপ্রসাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজের উত্তরও দেননি। এসডিপিও বলেন, ‘‘অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
অন্য দিকে, তৃণমূলের অভিযোগ, ওই রাতে ন্যাজাটের কালীনগর বাজারে তাদের একটি কার্যালয়ে আগুন ধরানো হয়। পুড়ে যায় বেশ কিছু চেয়ার এবং মনোনয়ন সংক্রান্ত কাগজপত্র। সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাজাহানের অভিযোগ, ‘‘সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে আমাদের কার্যালয়। কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সিপিএম এবং তাদের সহযোগী বিজেপি।’’ সিপিএম নেতা নিরাপদর পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূলের কর্মীরাই নিজেদের কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দোষ চাপাচ্ছেন বিরোধীদের ঘাড়ে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের প্রার্থীরাই যেখানে মনোনয়ন জমা দিতে পারছেন না, সেখানে আমরা গিয়ে ওদের পার্টি অফিস পোড়াব, এই অভিযোগ কি পাগলেও বিশ্বাস করবে?’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা শান্তি দলুইও। রবিবার ভোরে অগ্নিকাণ্ডের খবর চাউর হতেই উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনাস্থলে যান এসডিপিও। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে। ফরেন্সিক পরীক্ষা হবে। তদন্ত চলছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
দত্তপুকুরের খিলকাপুরে তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে হামলা, পরিবারের লোকজনকে মারধর, ভাঙচুর এবং লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে এক সিপিএম সমর্থক ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। রবিবার সকালের ঘটনা। আহত দু’জন চিকিৎসাধীন।
কামালের দাবি, ‘‘৩০-৪০ হাজার টাকা ও গয়না লুট করেছে ওরা। হামলাকারীরা সিপিএম করলেও তৃণমূলের একাংশের মদতে ওরা এলাকায় তাণ্ডব চালায়। আমি তৃণমূল করি। আমার পাশে দলের কেউ দাঁড়াননি।’’ এক সিপিএম নেতা বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা কেউই দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন।’’ স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘কামাল ঘটনার কথা দলকে জানাননি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। অভিযুক্তেরা পলাতক।