বাসি মিষ্টি খেয়ে বিপদ বাধাবেন না

হালখাতা তামাদি হয়ে গিয়েছে মাসখানেক হল। অক্ষয় তৃতীয়াও এ বছরের মতো মিটেছে। কিন্তু সেই উৎসব-অনুষ্ঠানের রেশ কাটছে না কাকদ্বীপ মহকুমার গ্রামে গ্রামে। আর হালখাতার বাসি হয়ে যাওয়া মিষ্টি খেয়ে দলে দলে লোকের পেট ছাড়ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ১২:৫০
Share:

ফাইল চিত্র।

হালখাতা তামাদি হয়ে গিয়েছে মাসখানেক হল। অক্ষয় তৃতীয়াও এ বছরের মতো মিটেছে। কিন্তু সেই উৎসব-অনুষ্ঠানের রেশ কাটছে না কাকদ্বীপ মহকুমার গ্রামে গ্রামে। আর হালখাতার বাসি হয়ে যাওয়া মিষ্টি খেয়ে দলে দলে লোকের পেট ছাড়ছে। বমি-পায়খানায় কাতর শ’য়ে শ’য়ে লোককে হাসপাতালেও ছুটতে হচ্ছে।

Advertisement

পরিস্থিতি এমনই, ‘হালখাতার বাসি মিষ্টি খাবেন না’— এই মর্মে পুলিশকে মাইকে প্রচারে নামতে হচ্ছে।

সম্প্রতি পাথরপ্রতিমা ও সাগরে মিষ্টি খেয়ে অসুস্থ হয়েছি‌লেন শ’দুয়েক মানুষ। এলাকায় উত্তেজনাও ছড়িয়েছিল। সে কারণেই সাবধানবাণী দরকার, বুঝেছে পুলিশ।

Advertisement

শুক্রবার থেকে সাগর থানা এলাকায় মাইকে প্রচার শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গরমে হালখাতার বাসি মিষ্টি যেন কেউ না খায়, তেলেভাজা এড়িয়ে চলে— এ সব কথাই বলা হবে প্রচারে। খাবারের গুণমান চোখে দেখে গন্ধ শুঁকে যতটুকু বোঝা যায়, তা যেন খেয়াল রাখেন সকলে, অনুরোধ করবে পুলিশ। আরও বলা হবে, বেশি বেশি করে জল খান গরমে। রোদ থেকে বাঁচুন।

হালখাতার বাসি মিষ্টি খেয়ে যে ভাবে অসুস্থের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে গত কয়েক দিনে, সে প্রসঙ্গে সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘এ রকম ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও রাগ তৈরি করে। তা থেকে যে কোনও সময়ে আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে সব রুখতে আগাম পদক্ষেপ হিসাবেই এই প্রচার কর্মসূচি।’’ ইতিমধ্যেই কাকদ্বীপ মহকুমার সব থানার আধিকারিকদের বলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে যে দোকানের হালখাতার মিষ্টি খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা চড়াও হয়। কাকদ্বীপের এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদারের কথায়, ‘‘কোনও অশান্তি হলে পুলিশকেই তো সামলাতে হবে। তাই আগামী কয়েক দিন ধরে প্রচার চালানো হবে।’’

এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করার কথা ছিল খাদ্য দফতরের। কিন্তু তারা এখনও চুপচাপ। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে বেশিরভাগ মিষ্টির দোকানের সামগ্রী নিয়ে কোনও গুণমান যাচাইয়ের ব্যবস্থাও নেই।

খাদ্য দফতরের কর্তারা বিষয়গুলি সম্পর্কে জানেন না বলে দাবি করছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ ভক্তরাম মণ্ডলের দাবি, তাঁকে কেউ এ বিষয়ে জানাননি। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের ঝুঁকি বেড়ে যায়, এ রকম কোনও কাজ করতে দেওয়া হবে না। এলাকার জেলা পরিষদ সদস্যদের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি।’’

জানা গেল, সাগরে বেশিরভাগ মিষ্টির দোকানেই তিন-চার দিনের বাসি মিষ্টি রাখা হয়। এলাকাবাসীর দাবি, কোনও দিনও খাদ্য পরিদর্শকেরা সে সব পরীক্ষা করেন না। যদিও খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, নজরদারি-পরিদর্শন চালানো হবে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, হালখাতা বা অক্ষ তৃতীয়ার মিষ্টি এত দিন পরে বিলিই বা হচ্ছে কেন, খাচ্ছেনই বা কেন মানুষ। স্থানীয় সূত্রের খবর, এটা সাগরের রীতি। দিনের দিন দোকানে পুজো হয় ঠিকই। কিন্তু একেক দিন খাওয়ান এক এক ব্যবসায়ী। কিন্তু মিষ্টির বরাত দেওয়া থাকে আগে। কবে সেই মিষ্টি তৈরি হল, সে খবর রাখে না কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement