চোরের দাপটে নাকাল বাসিন্দা, ব্যবসায়ী

কখনও দিন দুপুরে শহর এলাকার বন্ধ বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটছে। কখনও আবার রাতের অন্ধকারে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলে ঘুলঘুলি ভেঙে দোকানে ঢুকে মালপত্র নিয়ে পালাচ্ছে চোরেরা। বাদ যাচ্ছে না স্কুলও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৮
Share:

কখনও দিন দুপুরে শহর এলাকার বন্ধ বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটছে। কখনও আবার রাতের অন্ধকারে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলে ঘুলঘুলি ভেঙে দোকানে ঢুকে মালপত্র নিয়ে পালাচ্ছে চোরেরা। বাদ যাচ্ছে না স্কুলও। রাতের অন্ধাকারে পঁচিল টপকে স্কুলে ঘুরে বিদ্যুতের তামার তার চুরি করছে দুষ্কৃতীরা। কখনও আবার সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা খালি ট্রাকও লোপাট হয়ে যাচ্ছে। মোটরবাইক চুরির ঘটনাও ঘটছে।

Advertisement

জুন মাসেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবরা, বনগাঁ, অশোকনগর, বারাসত, বাগদা এলাকায় বেশ কয়েকটি ছোট বড় চুরি ঘটনা ঘটেছে। গোটা ঘটনায় আতঙ্কিত ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ। পুলিশ যে দুষ্কৃতীদের ধরতে চেষ্টা করছে তা নয়, পুলিশি ধড়পাকড়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু চোর ধরাও পড়েছে। খোওয়া যাওয়া কিছু মালপত্রও উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু এত কিছু পরেও চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। হঠাৎ করে চুরি ওই উপদ্রব বাড়া নিয়ে পুলিশ কর্তারাও উদ্বিগ্ন। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘চোরদের কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে তারা রীতিমতো পুলিশকে চ্যালেঞ্জ জানাতে নেমে প়ড়েছে।’’

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘হাবরা, অশোকনগর এলাকায় দিনের বেলায় যা দলটি চুরি করছিল, তাদের ধরা হয়েছে। বাকি চুরির সঙ্গে যুক্ত দুষ্কৃতীদের ধরতে বিশেষ ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। শীঘ্রই প্রতিটি চুরির কিনারা হয়ে যাবে, দুষ্কৃতীরাও ধরা পড়বে।’’

Advertisement

যদিও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, তাঁরা রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি গিয়ে নিশ্চিন্তে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। সকালে দোকান না খোলা না পর্যন্ত দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। গৃহস্থের বক্তব্য, বাডড়ি খালি রেখে যেতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন তাঁরা।

দিন কয়েক আগে সকালে হাবরা থানার গোয়ালবাটি বাজার এলাকায় কয়েকজন ব্যবসায়ী দোকান খুলে দেখেন, ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ টাকা উধাও। কিন্তু বাইরে থেকে দোকানে তালা যেমন ছিল, তেমনই ঝুলছে। ব্যবসায়ীদের অনুমান, চোরেরা এতটাই দক্ষ যে বাইরের তালা খুলে ভিতরে ঢুকে টাকা নিয়ে ফের সেই তালা লাগিয়েই তারা চম্পট দিয়েছে!

ক’দিন আগে হাবরা থানার পুলিশ পাঁচ চোরকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে চুরি হওয়া মালপত্রও কিছু উদ্ধার করা হয়েছে। তারা কয়েকটি চুরির কথাও কবুল করেছে। কিন্তু তারপরও ফের চুরি।

গাইঘাটা থানার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গাইঘাটা হাইস্কুল। এই ক’দিন আগের কথা। স্কুলের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী স্কুলে গিয়ে দেখেন, দোতলায় থাকা বিদ্যুতের (ওয়ারিং) তার চুরি হয়ে গিয়েছে। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অলোক বিশ্বাস বলেন, ‘‘পাঁচিল টপকেই সম্ভবত চোরেরা স্কুলে ঢুকে ছিল। দোতলার বন্ধ প্রায় ২০টি শ্রেণি কক্ষের বাইরে থাকা বিদ্যুতের তার চুরি করেছে। মোটরের তার, পানীয় জল সরবরাহের তার— সব নিয়ে গিয়েছে।’’ ওই ঘটনা জানাজানি হতে সে দিন দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কারণ, পাখা, পানীয় জল সরবরাহ সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অলোকবাবু বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে মোট তিনবার স্কুলে চুরির ঘটনা ঘটল। পুলিশ কিনারা করতে পারে নি।’’

বাগদার নাটাবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা বিকাশ মৃধার খালি ট্রাক রাখা ছিল স্থানীয় গোপালনগর-বাজিতপুর সড়কের পাশে। অভিযোগ, ভোররাতে ওই ট্রাক চুরি করে পালিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কিছু দিন আগে জেলা পুলিশের একটি দল আন্তঃরাজ্য ট্রাক পাচার চক্রের কয়েকজন পান্ডাকে গ্রেফতার করেছিল। তারপরেও ট্রাক চুরির ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বড়সড় চুরির ঘটনা ঘটেছে পেট্রাপোল এলাকাতেও। ওই ঘটনায় বাংলাদেশি চোরদের হাত থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। বিএসএফের সঙ্গেও পুলিশের এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যদিও চোরেরা এখনও অধরাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement