তথ্য যাচাই নিয়ে উদ্বেগ, বাড়তি টাকা গচ্চা অনেকের 

ভোর থেকে লাইনে দাঁড়ান তাঁরা। অভিযোগ, ব্লক অফিস চত্বরে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে টাকার বিনিময়ে ফর্ম ফিল আপ ও অন্য কাজ করে দিচ্ছেন কিছু ব্যক্তি।

Advertisement

সামসুল হুদা ও সমীরণ দাস 

ভাঙড় ও জয়নগর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৪৮
Share:

ভিড়: জয়নগর ১ নম্বর ব্লক অফিসে রেশন কার্ড সংশোধনের জন্য এসেছেন মানুষ। ছবি: সুমন সাহা

ব্লকে ব্লকে চলছে রেশন কার্ড সংশোধন ও নতুন রেশন কার্ড তৈরির কাজ। গত কয়েকদিন ধরেই এই কাজে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ব্লক অফিসগুলিতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। সোমবার জয়নগর ১ ব্লক অফিসে কয়েক হাজার মানুষ রেশন কার্ড সংশোধনে আসেন।

Advertisement

ভোর থেকে লাইনে দাঁড়ান তাঁরা। অভিযোগ, ব্লক অফিস চত্বরে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে টাকার বিনিময়ে ফর্ম ফিল আপ ও অন্য কাজ করে দিচ্ছেন কিছু ব্যক্তি। একটা ফর্ম ফিল আপ করতে ৫০, ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। একই ছবি ভাঙড়। জীবনতলা, বাসন্তীর বিভিন্ন ব্লকেও।

রেশন কার্ডের কাজের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোটারদের নির্বাচক তথ্য যাচাই কর্মসূচি বা ইলেক্টরস ভেরিফিকেশন প্রোগ্রামও (ইভিপি) শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় বা সচিত্র ভোটার পরিচয় পত্রে নাম ঠিকানা সঠিক আছে কিনা তা অনলাইনে যাচাই করে নিতে পারবেন ভোটাররা। ন্যাশনাল ভোটার সার্ভিস পোর্টাল বা ভোটার হেল্পলাইন অ্যাপের মাধ্যমে এই কাজ করা যাচ্ছে। কিন্তু অ্যাপ বা পোর্টালে সড়গড় নন অনেকই। ফলে তাঁরা বিভিন্ন সাইবার ক্যাফের দ্বারস্থ হচ্ছেন। অভিযোগ, এই সুযোগে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যেমন খুশি টাকা নিচ্ছে ক্যাফেগুলি। অনেক জায়গায় পরিচয়পত্র সংশোধনে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সরকারি কাজের জন্য বাড়তি এত টাকা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। পাশাপাশি ভোটার কার্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অনলাইন পদ্ধতি নিয়েও বিরক্ত সাধারণ মানুষের একাংশ। রেশন কার্ডের ক্ষেত্রে কাজ করাতে আসা সাধারণ মানুষদের অনেকেই বলছেন, ব্লকের বদলে পঞ্চায়েতে সংশোধনের ব্যবস্থা হলে অনেক সুষ্ঠ ভাবে কাজ হত। তাতে ভিড় হতো কম। দালাল চক্রও মাথা চাড়া দিতে পারত না।

Advertisement

সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একই সঙ্গে ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড সংশোধনের কাজ শুরু হওয়ায়, এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে অনেকের মধ্যে। তাঁরা ভাবছেন কার্ড সংশোধন না করলে এনআরসিতে নাম থাকবে না। তাই অতিরিক্ত খরচ করে হলেও মানুষ দ্রুত এই কাজ করিয়ে নিতে চাইছেন। ব্লক প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, কিছু মানুষ অযথা আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অনলাইনে ভোটার তালিকা সংশোধন ও রেশন কার্ড সংশোধনের কাজ একই সঙ্গে শুরু হওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ভোটার তালিকা সংশোধনের সঙ্গে রেশন কার্ড সংশোধনের কোনও সম্পর্ক নেই। মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয় তার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের দাবি।

ভাঙড়ের বাসিন্দা নাজমুল হক, শানুরা বিবিরা বলেন, ‘‘বলা হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে। আমরা এসব বুঝি না। তাই বাধ্য হয়ে কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন করিয়েছি। ৫০০ টাকা নিয়েছে।’’ ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সাইবার ক্যাফের মালিক ও ফটোকপির দোকানের মালিকদের ডেকে আমরা সাবধান করে দিয়েছি। অযথা যেন তাঁরা মানুষকে বিভ্রান্ত না করেন। নামমাত্র টাকায় যাতে তাঁরা মানুষের পরিষেবা দেন সে জন্যও বলা হয়েছে।’’

জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। যাঁরা অনলাইনে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে পারবেন, তাঁরা তা করবেন। যাঁরা পারবেন না, আমাদের ব্লক লেভেল অফিসাররা (বিএলও) যখন বাড়ি বাড়ি যাবেন তথ্য যাচাই করতে, তখনই তা সংশোধন করে নিতে পারেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement