মাঝে মধ্যেই হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হন রোগী

এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে। হাসপাতালের গেটে নিরাপত্তা কর্মীরা রয়েছেন। হাসপাতালে সিসি ক্যামেরাও আছে। এরপরেও হাবড়া  হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটায় চিন্তিত রোগীর বাড়ির লোকেরা।  

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবড়া শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪৮
Share:

হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে ছুটি দেওয়ার সময় দেখা হচ্ছে আধার বা ভোটার কার্ড। এক তরুণী তা দেখে সদ্যোজাত শিশুকে নিয়েই হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। দিন কয়েক আগে ঘটনাটি ঘটেছে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। এই ঘটনা প্রথম নয়। এই হাসপাতাল থেকে রোগী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। ওই তরুণীকে পরে যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই খুঁজে আনেন। তিনি জানান, তাঁর কাছে আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড কিছুই নেই। যদি তাঁকে ছুটি না দিয়ে আটকে রাখা হয়, এই আতঙ্কেই তিনি হাসপাতাল থেকে পালান।

Advertisement

এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে। হাসপাতালের গেটে নিরাপত্তা কর্মীরা রয়েছেন। হাসপাতালে সিসি ক্যামেরাও আছে। এরপরেও হাবড়া হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটায় চিন্তিত রোগীর বাড়ির লোকেরা।

ওই তরুণী বলেন, ‘‘নিজের ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড কিছুই নেই। তাই ভয় পেয়েছিলাম, যদি ছুটি না পাই হাসপাতাল থেকে। তাই শিশুকে কোলে নিয়ে পালিয়ে যাই।’’ নয়া নাগরিকত্ব আইনের ভয়েই কি তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন—এর কোনও উত্তর দেননি ওই তরুণী। তাঁর দাবি, বাপের বাড়ি বিড়া ইছাপুর এলাকায়। শ্বশুরবাড়ি দত্তপুকুর এলাকায়। কাজের সুবিধার জন্য হাবড়া জয়গাছি ৩১ নম্বর রেল গেটের কাছে ধানের চাতালে থাকেন ওই তরুণী ও তাঁর স্বামী। তরুণী নিখোঁজ হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খোঁজাখুঁজি শুরু করে। জয়গাছি এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে ফের হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়। এ বিষয়ে এক টোটো চালক সহযোগিতা করেছেন। বৃহস্পতিবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৩ ডিসেম্বর হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ওই তরুণী ভর্তি হন। তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ২৫ ডিসেম্বর প্রসূতি ওয়ার্ডের ভিতরে অন্য রোগীদের ছুটি দেওয়ার সময় আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড দেখছিলেন হাসপাতালের কর্মীরা। তার ফটো কপি জমা নেওয়া হচ্ছিল। যা দেখে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান ওই তরুণী। কারণ, তাঁর কাছে ভোটার বা আধার কার্ড নেই। ওই তরুণীর প্রশ্ন, প্রসবের পর ছুটি দেওয়ার সময় আধার বা ভোটার কার্ড দেখার এমন কোনও আইন হাসপাতালের আছে?

Advertisement

হাসপাতাল সুপার শঙ্করলাল ঘোষ জানান, বছর দু’য়েক আগে হাসপাতালে এক মহিলা ভর্তি হন। সন্তান প্রসবের পর সে সন্তান নিয়ে পালিয়ে যায়। সন্তানটি সে বিক্রি করে দেয় অন্য এক দম্পতির কাছে। পরে পুলিশ সন্তান উদ্ধার করে। হোমে পাঠানো হয়। মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই মহিলা নিজের ভুল নাম ঠিকানা বলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। পরে তিনি যে নামে ভর্তি হয়েছিলেন সেই নামের মহিলার কাছে সন্তান বিক্রি করেন। এ ভাবে শিশু আইনত বিক্রি হয়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ঘটনার পর থেকে আমরা প্রসূতি মহিলাদের কাছ থেকে আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড দেখতে চাই। প্রকৃতই তিনি ঠিক নাম বলছেন কিনা তার প্রমাণ রাখতেই এই ব্যবস্থা।’’ এই ঘটনার গাফিলতির অভিযোগে নার্স গেটে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীদের শোকজ করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

তবে হাবড়া হাসপাতাল থেকে রোগী নিখোঁজের ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে অভিযোগ। এ মাসেই অশোকনগরের বাসিন্দা এক বৃদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি হন। দিন কয়েক পরে তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। রোগীর আত্মীয়দের বক্তব্য, ‘‘টাকা দিয়ে আয়া রাখা হয়, তা সত্ত্বেও হাসপাতাল থেকে রোগী নিখোঁজ হয়ে যায়। আয়ারা ঠিকমতো রোগীর দেখাশোনা করেন না।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রোগীদের ওয়ার্ডে ঢোকা বেরনোর জন্য দু’টি গেট আছে। একটি গেটে নিরাপত্তা কর্মী বেশি করে রাখা হয়েছে। অন্যটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট স্লিপ দেওয়া হচ্ছে। এখন থেকে স্লিপ না দেখিয়ে ওয়ার্ডে ঢোকা বেরনো করা যাবে না। হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘বিকেল ৪-৬ পর্যন্ত রোগীকে ছুটি দেওয়া হয়। ওই সময় রোগীর আত্মীয়রা ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েন। তখন কে রোগী, আর কে রোগী নয়, তা বোঝা যায় না। ওয়ার্ড থেকে বেরনোর আরও একটি গেট আছে। সেটি সুইপাররা আবর্জনা ফেলার জন্য ব্যবহার করেন। সেই গেটেও নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement