Panchayat Election

‘পুলিশ-প্রশাসন যেন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে’

ভোটকে কেন্দ্র করে রক্তারক্তি এ বাংলায় পুরনো ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটও ব্যতিক্রম নয়। সে বার যে সব অঞ্চলে হানা দিয়েছিল সন্ত্রাস, এ বার ভোট নিয়ে কী বলছেন সেখানকার মানুষ?

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:১৩
Share:

এই স্কুলেই ভোটকেন্দ্র করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। নিজস্ব চিত্র

২০১৮ সালের মতো এমন ত্রাসের ভোট আর দেখেননি, জানালেন বছর সত্তরের বৃদ্ধ সন্তোষ সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এখানে তার আগে কখনও সন্ত্রাস, হিংসা ঘটেনি ভোটে। সে বার চোখের সামনে দেখেছিলাম, ছাপ্পা, রিগিং কাকে বলে।’’

Advertisement

গ্রামের মানুষ জানালেন, পঞ্চায়েত ভোটের দিন বনগাঁ ব্লক জুড়ে সে বার অশান্তি ছড়িয়েছিল। বুথ জ্যাম, ছাপ্পা, বহিরাগত বাইক বাহিনীর তাণ্ডব চলেছিল। কালমেঘা প্রথমিক স্কুলের বুথ সে সব ঘটনারই সাক্ষী। এখানে ব্যালট বাক্স লুট করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিছু ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে ডোবার জলে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। প্রিসাইডিং অফিসারকে হুমকি দেওয়া হয়। মারপিট, রক্তপাতের ঘটনাও ঘটেছিল। ফের ভোট গ্রহণ করতে হয়েছিল এখানে।

পুরনো সে দিনের কথা শোনা গেল গ্রামবাসীদের কাছে। সকাল থেকে ভোট শান্তিতেই হচ্ছিল। বিকেলের দিকে বহিরাগতদের দাপাদাপি শুরু হয়। স্থানীয় কিছু লোকও বুথে ঢুকে ভয় দেখিয়ে ছাপ্পা দিতে শুরু করে।

Advertisement

তখনও বুথের বাইরে লম্বা লাইন। হঠাৎ জানানো হয়, দেড়শো ব্যালট কম পড়েছে। আর ভোটগ্রহণ হবে না। এই ঘটনায় বহু মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ভোট লুটকারীদের সঙ্গে মারপিট বেধে যায়।

গ্রামবাসীর প্রতিরোধের সামনে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ব্যালট বাক্সে জল ঢেলে দেন কিছু গ্রামবাসী। বাক্সগুলি এনে বাইরে চাতালে রাখা হয়। বাক্স খুলে কল পাম্প করে তাতে জল দেন অনেকে। এরপরে ব্যালট দলা পাকিয়ে ফেলেও দেওয়া হয়। কয়েকটি ব্যালট বাক্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ডোবায় ফেলা হয় কিছু ব্যালট। কিছু ব্যালট পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের বাড়ির উঠোনে গিয়ে ফেলে আসে উত্তেজিত জনতা।

গোটা ঘটনা কার্যত দাঁড়িয়ে দেখেন হাতেগোনা কয়েক জন পুলিশ কর্মী। পরে বিশাল বাহিনী পৌঁছয়। ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। পরে কড়া নিরাপত্তায় ফের ভোটগ্রহণ হয়।

গণনায় বিজেপি প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। গ্রামবাসীদের অনেকেরই দাবি, ফের ভোট নেওয়ার সময়ে যে ধরনের নিরাপত্তা ছিল, তেমন আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা যেন থাকে এ বার পঞ্চায়েত ভোটে।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, গত পঞ্চায়েত ভোটে কালমেঘা এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়েছিল তৃণমূল। গ্রামবাসীরা জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করেন। বনগাঁর সিপিএম নেতা পীযূষকান্তি সাহা বলেন, ‘‘বনগাঁ ব্লক জুড়ে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ভোট লুট করেছিল। তারই একটা অংশ দেখা গিয়েছিল কালমেঘা স্কুলে। সে দিন মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।’’ বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডলের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে কালমেঘায় তৃণমূল ভোট লুট করে ছাপ্পা দিয়েছিল। ব্যালট বাক্স সিল করে দিয়েছিল। গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে ব্যালট বাক্স ভেঙে, পুড়িয়ে দেন।’’ দু’দলেরই বক্তব্য, এ বার একই ঘটনা ঘটলে গ্রামের মানুষই ফের প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।

সন্ত্রাসের অভিযোগ অস্বীকার করে যুব তৃণমূলের নীলদর্পণ ব্লকের কো-অর্ডিনেটর আনিসুজ্জমান মণ্ডল বলেন, ‘‘গত বার পঞ্চায়েত ভোটে কালমেঘায় শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছিল। বিজেপি জিততে পারবে না বুঝতে পেরে দুষ্কৃতীদের এনে হামলা চালায়। ব্যালট বাক্স পুড়িয়ে দেয়।’’

রাজনৈতির এই চাপানউতোর এ বার দেখতে চান না মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, ভোটটা যেন শান্তিতে হয়। বৃদ্ধ সন্তোষের কথায়, ‘‘ভোটের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক পুলিশ-প্রশাসন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement