অপেক্ষা: ঘাটে দাঁড়িয়ে ট্রলার। ছবি: দিলীপ নস্কর
অগ্নিমূল্য ডিজেল। বিরূপ প্রকৃতিও। দুইয়ে মিলে ইলিশের মরসুমে সমস্যায় পড়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ট্রলার মালিকেরা। আখেরে যার মূল্য চোকাতে হচ্ছে আম বাঙালিকেই। ভরা বর্ষাতেও পাতে ইলিশ উঠল না এখনও! ও দিকে, বাংলাদেশ থেকেও সে ভাবে ইলিশ আসা বন্ধ বহু বছর ধরেই।
ট্রলার মালিকেরা জানাচ্ছেন, ইলিশের খোঁজে বার বার সমুদ্রে পাড়ি দিয়েও ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “মরসুমের শুরুতে ভাল ইলশেগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। ভেবেছিলাম দু’বছর পরে এ বার ইলিশ মিলবে। কিন্তু গভীর সমুদ্রে পুবালি বাতাসের পরিবর্তে পশ্চিমের বাতাস বওয়ায় মাছ সব বাংলাদেশের দিকে নেমে গিয়েছে। ফলে ইলিশ মিলছে না। বছর দু’য়েক আগেও একবার সমুদ্র যাত্রায় একেকটা ট্রলার প্রায় ৫০ মন ইলিশ নিয়ে ফিরত। এখন প্রায় খালি ট্রলার ঘাটে ফিরছে।”
তার উপরে জ্বালানির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সব মিলিয়ে লোকসানের বহর সামলাতে নাজেহাল ট্রলার মালিক। ট্রলার নামাতেই চাইছেন না অনেকে। ফলে টান পড়েছে মৎস্যজীবীদের রোজগারেও।
গত দুই মরসুম সমুদ্রে ইলিশ মেলেনি। লোকসানেই ট্রলার চালিয়েছেন অধিকাংশ মালিক। অনেকেই ঋণ নিয়ে ট্রলার নামান। তাঁরা ঋণ শোধ করতে পারেননি বলে জানালেন। তার উপরে পর পর দুর্যোগে অনেক ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রলার সারাতেও খরচ হয়েছে বিস্তর।
সব ঝড়ঝাপটা সামলে এ বার মরসুমের শুরুতে সমুদ্র পাড়ি দেয় বেশ কিছু ট্রলার। শুরুর দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে সমস্যা হয়। তবে পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও, সে ভাবে মাছ মিলছে না বলে জানালেন মৎস্যজীবীরা। ইতিমধ্যেই একেকটি ট্রলার চার-পাঁচ বার সমুদ্রে গিয়েও প্রায় খালি হাতে ফিরেছে।
ডিজেলের দাম বাড়ায় সমুদ্রযাত্রার খরচও বেড়েছে। কাকদ্বীপ মৎস্য বন্দর থেকে নিয়মিত সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া মৎস্যজীবীরা জানান, সপ্তাহখানেকের জন্য সমুদ্রে পাড়ি দিতে জ্বালানি, মৎস্যজীবীদের খাওয়া-দাওয়া, মাছ সংরক্ষণের বরফ-সহ মোটা টাকা খরচ হয়। বছর কয়েক আগেও একটা ট্রলারের একবার সমুদ্রে যেতে ৮০-৯০ হাজার টাকার খরচ হত। ডিজেল-সহ অন্য নানা জিনিসের দাম বাড়ায় এখন সেই খরচ গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকায়। কাকদ্বীপের ট্রলার মালিক শঙ্কর দাস বলেন, “গত দু’বছর মাছ হয়নি। তা-ও নিয়মিত ট্রলার সমুদ্রে পাঠিয়েছি। বাজারে ধারবাকি হয়ে গিয়েছে। এ বার এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, সমুদ্রে মাছ মিলছে না। ফলে ট্রলার ঘাটেই বাঁধা রয়েছে। অন্য ট্রলার সমুদ্রে গিয়ে মাছ পেলে, তবেই ফের ট্রলার পাঠানোর কথা ভাবব।”