রোগীর শয্যায় রাখা রান্নার সরঞ্জাম। নিজস্ব চিত্র।
রোগী থাকার শয্যা হয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীর বিছানা। অপারেশন থিয়েটারে চলছে রান্না। স্থায়ী চিকিৎসক না থাকায় একজন অস্থায়ী চিকিৎসক দিয়ে কোনও ভাবে চলছে দৈনন্দিন কাজ। রায়দিঘির পুরন্দরপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এখন এমনই অবস্থা।
ব্লক প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মথুরাপুর ২ ব্লকের কাশীনগর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১৯৭৪ সালে তৈরি হয়েছিল। প্রায় ১৪ বিঘা জমির উপর তৈরি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অফিস ছাড়াও অপারেশন থিয়েটার, ডেলিভারি রুম, অন্তর্বিভাগ, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার আবাসন রয়েছে। অন্তর্বিভাগে রয়েছে ১০টি শয্যা। রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতাল তৈরি হওয়ার আগে এটি ছিল এলাকার একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র। মথুরাপুর ১ ও ২ ব্লকের কাশীনগর, কৌতলা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর উত্তর, খাড়ি ও গিলারছাঁট পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার বাসিন্দা এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কয়েক মাস ধরে কোনও স্থায়ী চিকিৎসক নেই। একজন অস্থায়ী মহিলা চিকিৎসকের ভরসায় চলছে হাসপাতাল। চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ অন্তর্বিভাগ। অপারেশন থিয়েটারটি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের রান্না করার কাজে।
মথুরাপুর ২ ব্লকের বিএমওএইচ প্রণবেশ হালদার বলেন, ‘‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক হঠাৎ না বলে ছুটিতে চলে গিয়েছেন। তাই সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’ তাঁর আশ্বাস, দিন কয়েকের মধ্যে সমস্যা মিটে যাবে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, একজন অস্থায়ী চিকিৎসক ছাড়া ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বর্তমানে তিন জন নার্স, এক জন ফার্মাসিস্ট, দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও এক জন অস্থায়ী ঝাড়ুদার রয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ অপারেশন থিয়েটার, প্রসূতি, গর্ভবতী ও শিশু বিভাগ। বর্তমানে জ্বর বেড়ে গেলেও রোগীকে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে মথুরাপুর বা রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটা করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু হওয়ার পরে এলাকার চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত হওয়ার আশা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন প্রায় কোনও পরিষেবা মেলে না। স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন মোল্লা, রবিউল মোল্লার অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত অস্থায়ী মহিলা চিকিৎসক রোগীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেন না। যদিও কাবেরী মণ্ডল নামে ওই মহিলা চিকিৎসকের দাবি, ‘‘যথাসাধ্য পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’’
মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ লুৎফা শেখ সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘ওই হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতরের একটি প্রতিনিধি দল ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঘুরে গিয়েছেন।’’