অসীম মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণার একটি চক্রের হদিস পেল বনগাঁ সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার ওই চক্রের পাণ্ডা এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটা থানার চাঁদপাড়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম অসীম মণ্ডল। শুক্রবার তাকে বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ধৃতকে জেরা করে ওই চক্রের বাকি সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
কী ভাবে চক্রটির কারবার চলত?
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অসীম চাঁদপাড়া এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে অফিস খুলে বসেছিল। চারদিকে তার এজেন্ট ছড়িয়ে থাকত। তাদের কাজ ছিল অল্প সুদে লোভনীয় অফারে ঋণের টোপ দেওয়া। কেউ আগ্রহী হলে তাঁকে অসীমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হত। গ্রাহক এলে তাঁদের কাছ থেকে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড এবং ব্যাঙ্কের পাসবই চেয়ে তার ফোটোকপি করে রাখত অসীম। মোবাইলে ওই ব্যক্তির ছবিও তুলে রাখত। তাঁদের বলা হত, ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঋণের টাকা ঢুকবে। অভিযোগ, গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে ঋণের টাকা তো ঢুকতই না, উল্টে কিস্তিতে টাকা কাটা শুরু হত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁরা ঋণের আশায় অসীমের কাছে নথিপত্র জমা দিতেন, তাঁদের নথি ব্যবহার করে চক্রের সদস্যরা চাঁদপাড়া এলাকার একটি মোবাইলের শোরুম থেকে কিস্তিতে নির্দিষ্ট সংস্থার দামি মোবাইল কিনত। সেই কিস্তির টাকাই শোধ হত ঋণ নিতে আসা ওই ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট থেকে। মোবাইলগুলি অসীম বাইরে চড়া দামে বিক্রি করত। এই চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মোবাইল পাচার চক্রের যোগসাজশ আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশ জানাচ্ছে, বনগাঁ মহকুমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মোবাইল পাচার নতুন কোনও ঘটনা নয়। সম্প্রতি গোপালনগর থানার পুলিশ একটি আন্তর্জাতিক মোবাইল পাচার চক্রের হদিস পেয়েছিল। এক বাংলাদেশি পাচারকারীকে গ্রেফতারও করা হয়। তার কাছে থেকে প্রচুর মোবাইল উদ্ধার হয়েছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯ অক্টোবর বনগাঁ শহরের প্রফুল্লনগর সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মালতি দাস সাইবার ক্রাইম থানায় অসীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পুলিশকে তিনি জানান, এক পরিচিতের মাধ্যমে তিনি অসীমের খোঁজ পেয়েছিলেন। ওই মহিলা ট্রেনে চানাচুর বিক্রি করেন। মালপত্র কেনার জন্য তাঁর ঋণের প্রয়োজন ছিল। তিনি অসীমের অফিসে যোগাযোগ করলে তাঁর কাছ থেকে নথিপত্র চাওয়া হয়। তাঁকে বলা হয়, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঋণের টাকা ঢুকে যাবে। অভিযোগ, তাঁর কাছে কোনও টাকা ঢোকেনি, উল্টে অ্যাকাউন্ট থেকে ২৯৫ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, মোবাইল কেনার জন্য কিস্তির টাকা কাটা হয়েছে। মালতি অসীমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁকে বলা হয়, একটা সমস্যা হয়েছে, দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সমস্যা না মেটায় তিনি পুলিশে অভিযোগ জানান।
একই ভাবে প্রতারিত হয়েছেন বনগাঁ শহরের বাসিন্দা দেবায়ণ দে। তিনিও এক পরিচিত মহিলার মাধ্যমে অসীমের খোঁজ পেয়েছিলেন। দেবায়ণ বলেন, ‘‘আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১১ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। এখন ওই অ্যাকাউন্টে টাকা রাখতে পারছি না। রাখলেই টাকা কাটা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি আমার মতো প্রায় ২০০ মানুষ এ ভাবে প্রতারিত হয়েছেন।’’
পুলিশ জানিয়েছে, বনগাঁ মহকুমা এবং সংলগ্ন এলাকায় চক্রটি জাল বিছিয়েছিল। ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ টাকা তারা আত্মসাৎ করেছে। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই ধরনের সমস্যা হলে দ্রুত ব্যাঙ্কে ও পুলিশে যোগাযোগ করা উচিত। পাশাপাশি লেনদেন সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে। টাকা দেওয়া ও নেওয়া, দু’ক্ষেত্রেই কোনও ভুঁইফোঁড় সংস্থাকে বিশ্বাস করা উচিত নয়।’’