—ফাইল চিত্র।
সমবায় ব্যাঙ্কে জালিয়াতির ঘটনায় ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহের ভাইপো সঞ্জীব (পাপ্পু) সিংহ এবং তাঁর স্ত্রীকে ফের হাজিরার নোটিস ধরাল পুলিশ। মাস দু’য়েক আগেও তাঁদের তদন্তকারী অফিসারের কাছে হাজিরার জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছিল। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ জানিয়েছে, পাপ্পু বা তাঁর স্ত্রী— কেউই হাজির না হওয়ায় ফের নোটিস ধরানো হয়েছে। তাঁদের তিন দিনের মধ্যে তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে। অর্জুনের অভিযোগ, তৃণমূল পুলিশকে দিয়ে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করছে। গত বছরের মার্চ পর্যন্ত ভাটপাড়ার পুরপ্রধান, তথা বিধায়ক ছিলেন অর্জুন। তখন তিনি অবশ্য তৃণমূল শিবিরে ছিলেন। গত বছর এপ্রিলে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে সাংসদ হন। ভাটপাড়া পুরসভার অধীনে একটি সমবায় ব্যাঙ্ক রয়েছে। অর্জুন পুরপ্রধান থাকাকালীন পুরসভার বিভিন্ন কাজের জন্য বেশ কিছু ঠিকাদারকে ওই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ দেওয়া হয়। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে অনাস্থা এনে তৃণমূল অর্জুনকে পুরপ্রধানের পদ থেকে অপসারিত করে। লোকসভা ভোটে বিজেপি ওই কেন্দ্রে জেতার পরে পুরপ্রধান নির্বাচনেও জিতে যায় তারা। পুরপ্রধান হন অর্জুনের আর এক ভাইপো সৌরভ সিংহ। কিন্তু ছ’মাস কাটতে না কাটতে পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। তারপরেই সমবায় ব্যাঙ্ক নিয়ে তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অপরাধদমন শাখায় অভিযোগ করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মোট ১২ কোটি টাকার অনিয়ম তাদের নজরে এসেছে। দেখা গিয়েছে, ওই ব্যাঙ্ক থেকে বেশ কয়েকজন কাজের জন্য ঋণ পেলেও তা শোধ করেননি। আবার যে কাজের জন্য তাঁদের ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেই কাজেরও অস্তিত্ব মেলেনি। ব্যারাকপুরের কমিশনারেটের ডিসি (উত্তর) অজয় ঠাকুর জানান, পাপ্পু সিংহ এবং তাঁর স্ত্রী নিতুর নামে অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের নামে থাকা সংস্থার বিরুদ্ধে জালিয়াতির যে অভিযোগ উঠেছে, সেই সংক্রান্ত কিছু নথিও মিলেছে। সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাপ্পু ও তাঁর স্ত্রীকে আগেও নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা হাজির হননি।
নোটিসে হাজিরার জন্য যে সময় তাঁদের দেওয়া হয়েছিল, সেই সময় অনেক দিন আগেই পার হয়ে গিয়েছে। লকডাউন চলায় পুলিশ নতুন করে নোটিস পাঠায়নি। বৃহস্পতিবার অজয় ঠাকুরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অর্জুন সিংহের বর্তমান বাসভবন মজদুরভবনে যায়। অজয় জানান, পাপ্পু বাড়ির সামনেই ছিলেন। পাপ্পু এবং তাঁর স্ত্রীর নোটিস দু’টি তাঁর হাতেই দেওয়া হয়। তদন্তকারী অফিসারের সামনে হাজির হওয়ার জন্য তাঁদের তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
অর্জুন বলেন, “তৃণমূলের সাজানো অভিযোগে পুলিশ আমাদের অন্যায় ভাবে হেনস্থা করছে। আমাকে খুনের চক্রান্ত করা হয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছি।” সোমনাথ বলেন, ‘‘পুরসভা এবং ব্যাঙ্কটিকে অর্জুন নিজের পরিবারের সদস্যদের পকেট ভরাতে ব্যবহার করেছিলেন। ওই টাকা মানুষের সঞ্চয়। তার হিসেব ওঁকে দিতে হবে।’’