ক্ষোভ: বেশি ফি নেওয়ার অভিযোগে জয়নগরের একটি স্কুলে অভিভাবকেরা সরব হয়েছেন। ফাইল চিত্র
দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। সুষ্ঠু পঠন পাঠনের জন্য তাই অনেক ক্ষেত্রেই আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিয়ে কাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছে বহু স্কুল। সরকারি হিসেবের বাইরে নিজস্ব তহবিল থেকেই এদের বেতন দিতে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে। শুধু শিক্ষকই নয়, বহু স্কুলে একাধিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর পদও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সে ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি সামাল দিতে আংশিক সময়ের কর্মী দিয়ে কাজ চালায় স্কুলগুলি। আর তা করতে গিয়েই তৈরি হচ্ছে সমস্যা।
বৃহস্পতিবার জয়নগর ইনস্টিটিউশন ফর বয়েজ স্কুলে ছাত্র ভর্তির সময়ে অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, রসিদ ছাড়াই এই টাকা নিচ্ছিল স্কুল। বিক্ষোভের মুখে ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে হয় স্কুলকে। স্কুলের দাবি, আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন দিতে এ ভাবে টাকা তোলা ছাড়া উপায় নেই। শুধু ওই স্কুলই নয়, আশেপাশের একাধিক স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অভিভাবকদের থেকে তোলা টাকা দিয়েই আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন দেওয়া হয়। সরকারি নিয়মবহির্ভূত হওয়ায় এই টাকার হিসেব দেখানো যায় না স্কুলের বার্ষিক অডিটেও। অভিভাবকেরা এই টাকা না দিলে, কী ভাবে তাঁদের বেতন দেওয়া হবে, জানে না স্কুলগুলি। সে ক্ষেত্রে আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বাদ দিতে হতে পারে বলেও জানায় কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
জয়নগর ইনস্টিটিউশন স্কুল সূত্রে খবর, স্কুলে পূর্ণ সময়ের শিক্ষাকর্মী নেই। ফলে পুরো কাজটাই সামলান আংশিক সময়ের কর্মীরা। পূর্ণ সময়ের শিক্ষকও প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়ে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। জয়নগরের আরও একটি নামী স্কুল জেএম ট্রেনিংয়ের ছবিটাও একই। স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ১৭০০। পূর্ণ সময়ের শিক্ষক থাকার কথা ৩৫ জন। কিন্তু এই মূহূর্তে শিক্ষক রয়েছেন ২৬ জন। ফলে বেশ কয়েকজন আংশিক সময়ের শিক্ষককে দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এ বার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে নজরকাড়া ফলাফল করেছে দক্ষিণ বারাসতের শিবদাস আচার্য্য উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। পূর্ণ সময়ের শিক্ষক থাকার কথা ৫৪ জন। সেই জায়গায় রয়েছেন ৪১ জন শিক্ষক। বাধ্য হয়ে বেশ কয়েকজন আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করেছে স্কুল। বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সাধারণত মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের আড়াই-তিন হাজার এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ালে হাজার চারেক টাকা সাম্মানিক দেওয়া হয়। শিক্ষাকর্মীদের সাম্মানিক অনেক ক্ষেত্রে আরও কম। দীর্ঘদিন ধরে আংশিক সময়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করা জয়নগরের এক যুবকের কথায়, “বহু দিন শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই আংশিক সময়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। স্কুল সামান্য সাম্মানিক দেয়। তাতে চলে না। তবু পড়ানোর নেশায় কাজ করে যাচ্ছি।”
জয়নগর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মানস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন বাবদ মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকারও বেশি খরচ হয়। সরকার এই টাকা দেয় না। ফলে এ ভাবে টাকা তোলা ছাড়া তো উপায় নেই। অভিভাবকেরা না চাইলে আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বাদ দিয়েই স্কুল চালাতে হবে। তাতে স্কুলের পঠন-পাঠনে ক্ষতি হবে।” দক্ষিণ বারাসত শিবদাস আচার্য্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা স্কুলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেক স্কুলে পূর্ণ সময়ের শিক্ষকের অভাবে এঁরাই সব কাজ সামলান। অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক থাকেন না। তখনও আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিয়েই সেই বিষয় পড়াতে হয়।”
সরকারি তরফে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি উঠছে বিভিন্ন মহলে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শিক্ষা আধিকারিক প্রদ্যোত সরকার অবশ্য বলেন, “সরকারি ভাবে আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগের নিয়ম নেই। ফলে বেতন বা আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হয় না।” জয়নগরের পুর প্রশাসক এবং কংগ্রেস নেতা সুজিত সরখেল বলেন, “সরকার স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া করতে পারছে না। পূর্ণ সময়ের শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় কিছু স্কুলে বেকার ছেলেমেয়েরা পড়াচ্ছে। সরকার ইমাম ভাতা-পুরোহিত ভাতা দিচ্ছে। এঁদের পাশেও দাঁড়ানো উচিত।”