পরোয়া-করি-না: করোনা-বিধি মাথায় না রেখেই চলছে প্রচার। হাবড়ায় রাহুল সিংহ।
নতুন করে বাড়ছে সংক্রমণ। সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বলছেন মাস্ক পরার কথা। দূরত্ববিধি এবং কোভিড-স্বাস্থ্যবিধি ফের কড়া ভাবে মেনে চলার কথা। কিন্তু ভোটের আবহে এ বঙ্গে সে সব কথা কানে যাচ্ছে আর কার! নেতারা ব্যস্ত ভিড় টানতে। বরং ভিড়, ঘেঁষাঘেঁষি, ঠাসাঠাসি না হলে তাঁদের রক্তচাপ বাড়ছে। বড় নেতাদের সভায় লোক জড়ো করতে না পারলে বকুনি খাচ্ছেন স্থানীয় নেতৃত্ব।
এই আবহে, রবিবাসরীয় ভোটের প্রচারে জায়গায় জায়গায় দেখা গেল, করোনা-বিধি শিকেয়। এমনকী, প্রার্থীর সমর্থনে চিকিৎসকদের মিছিলেও মানা হল না দূরত্ববিধি। কারও কারও মাস্কও চোখে পড়েনি।
ভাঙড়ে তৃণমূলের চিকিৎসক প্রার্থী রেজাউল করিমের সমর্থনে এ দিন মিছিলে হাঁটেন চিকিৎসকেরা। গায়ে অ্যাপ্রন, গলায় স্টেথোস্কোপ নিয়ে তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা ওই মিছিলে পা মেলান। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ-সহ বিভিন্ন হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা ছিলেন মিছিলে। মিছিলের পাশাপাশি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ভাঙড়ের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা এবং ওষুধ দেন তাঁরা। চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষে রৌণক হাজারি বলেন, ‘‘গ্রাম বাংলায় চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আমরা আমাদের চিকিৎসক প্রার্থীর সমর্থনে রাস্তায় নেমেছি।’’ এ দিনের মিছিলে চিকিৎসকদের মাস্ক থাকলেও, কর্মীরা অনেকেই মাস্কহীন ছিলেন। শারীরিক দূরত্বও মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
ক্যানিং পশ্চিমের তৃণমূল প্রার্থী পরেশরাম দাস এ দিন প্রচার সারেন পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিয়ে। পরেশ এ দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের প্রচার সারেন। মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি তাঁদের হাতে একটি করে গাছ তুলে দেন তিনি। কর্মীরা একদিকে যেমন পরেশের পক্ষে ভোটের আবেদন জানিয়ে স্লোগান দেন, তেমনই ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান’ বলেও আওয়াজ তোলেন। পরেশ বলেন, “আজ বিশ্ব বনায়ন দিবস। পরিবেশকে রক্ষা না করলে আমরা কেউই বাঁচব না। তাই এই বিশেষ দিনে এলাকার মানুষের হাতে গাছ তুলে দিয়ে পরিবেশকে বাঁচানোর বার্তা দিচ্ছি।’’ তৃণমূল প্রার্থীর গাছ দানকে অবশ্য কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, “ভাল উদ্যোগ। তবে শুধু গাছের চারা দিলেই হবে না। সেটিকে যথাযথ ভাবে লাগানো ও তার রক্ষণাবেক্ষণ যেন হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, “শুধুমাত্র ভোটের জন্য গাছ বিলি করে লাভ নেই। সত্যি সত্যি গাছের প্রতি ভালবাসা প্রয়োজন।” পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিলেও করোনা সচেতনতার দিক উপেক্ষিতই ছিল পরেশের প্রচারে। মাস্কহীন ছিলেন বহু কর্মী। ছিল না শারীরিক দূরত্বও।
দুই জেলায় অনেক প্রার্থীই এ দিন প্রচার সেরেছেন। কেউ বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন। কেউ ঘুরেছেন হাটেবাজারে। পথসভা হয়েছে। সর্বত্রই ভিড়ে রাশ আগল ভেঙেছে। মাস্ক ছিল না অনেকের মুখে। শারীরিক দূরত্ববিধি তো নয়ই। —ছবি: সুজিত দুয়ারি, নির্মাল্য প্রামাণিক ও সামসুল হুদা