প্রথম ভোট দেওয়ার আনন্দে মাংস রান্না হবে ঋতপার বাড়িতে

ইছামতী নদীর দু’পাশে বাদুড়িয়া পুর ওয়ার্ডগুলির মধ্যে দিয়েই চলে গিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত। পাঁচটি ভাগে পুর ওয়ার্ডের মধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু ওয়ার্ড থাকায় বাদুড়িয়ার পুর এলাকার বেশিরভাগটাই একটি গ্রামের চিত্র নিয়েছে। এই পুরসভায় ১৭টি ওয়ার্ড। বুথ সংখ্যা ৪৬টি। ভোটার সংখ্যা ৩৮,৯৮৬ জন। এঁদের মধ্যে পনেরো শতাংশ ভোটার আছেন যাঁরা এ বারে প্রথম ভোট দেবেন।

Advertisement

নির্মল বসু

বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৭
Share:

ইছামতী নদীর দু’পাশে বাদুড়িয়া পুর ওয়ার্ডগুলির মধ্যে দিয়েই চলে গিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত। পাঁচটি ভাগে পুর ওয়ার্ডের মধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু ওয়ার্ড থাকায় বাদুড়িয়ার পুর এলাকার বেশিরভাগটাই একটি গ্রামের চিত্র নিয়েছে। এই পুরসভায় ১৭টি ওয়ার্ড। বুথ সংখ্যা ৪৬টি। ভোটার সংখ্যা ৩৮,৯৮৬ জন। এঁদের মধ্যে পনেরো শতাংশ ভোটার আছেন যাঁরা এ বারে প্রথম ভোট দেবেন।

Advertisement

এ দিন দেখা হল মন্দিরপাড়ায় সোনালি রায়ের সঙ্গে। প্রথম বার ভোট দেবেন বসিরহাট কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীটি। ঘরের কাজ সারতে সারতে বললেন, ‘‘দারুণ ব্যাপার। খুব আনন্দ হচ্ছে। ওই দিনটার জন্য ছটফট করছি।’’ জানালেন, কারণ, ছোট থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে যেতেন। ভোটকাকুরা তখন কালি লাগিয়ে দিতেন আঙুলে। তাতেই কী খুশি! আর এ বার তো সত্যি সত্যি নিজের ভোট দেবেন। পরিচয়পত্র দেখিয়ে সোনালি বলেন, ‘‘এই কার্ড আমাকে নাগরিকের মর্যাদা দিয়েছে। নিজের একটা পরিচয় হয়েছে। সে কারণে খুব যত্ন করে রেখেছি।’’ ভোটের দিন পছন্দের কালো রঙের চুড়িদার পরে সকাল সকাল ভোট কেন্দ্র যাবেন বলে জানান তিনি। প্রার্থীদের কাছে তাঁর একটাই আবেদন, ‘‘দয়া করে আপনারা আমাদের প্রথম ভোটের মর্যাদা রাখবেন। আমরা অনেক আশা নিয়ে ভোট দিচ্ছি। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থান, এলাকায় শৌচাগার, আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল এবং বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তার দিকে একটু নজর দেবেন।’’

বাদুড়িয়া ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক হাফিজুর রহমানের ছেলে সাহিল রহমান তখন পড়ছিল। হাবরা চৈতন্য কলেজে বিএসসি-র প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের কথায়, ‘‘সেই কবে থেকে দেখছি বাবা-মা লাইনে দাঁড়ানোর পর একটা ঘরের মধ্যে ঢুকে ঘেরা জায়গাতে নিজেদের ভোট দেন। এমন একটা দিনের জন্য আমিও অপেক্ষা করছিলাম। এ বারে সেই দিনটি আশার অপেক্ষা। ছবিওয়ালা পরিচয়পত্র পেয়ে একটা আলাদা অনুভূতি হচ্ছে।’’ তাঁর ভোট যাতে অন্য কেউ দিয়ে দিতে না পারে সে জন্য সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে যাবেন বলে জানালেন। তবে তাঁর অভিযোগ, ভোট দিলেও রাস্তা, নিকাশি ব্যবস্থা, পরিস্রুত পানীয় জল এ সবের কোনও উন্নতি হয় না। সেই কারণে জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে সাহিল বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর পেরিয়ে এসেও আমরা এখনও দারিদ্র্য দূর করতে পারলাম না। তাই আপনাদের কাছে আমার অন্যতম চাহিদা, স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের উন্নতির জন্য কাজ করুন। তবেই আমাদের ভোট দেওয়া সফল হবে।’’ তারাগুনিয়ায় বাসিন্দা বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুমন চট্টোপাধ্যায়ও প্রথম বার ভোট দেবেন। বললেন, ‘‘এত দিন বাবা-মায়ের সঙ্গে দিদি ভোট দিতে যেত। সে সময়ে বাড়িতে বসে আমার খুব খারাপ লাগত। এ বারে ভোটার হয়ে সেই দুঃখ দুর হল। ভেবে রেখেছি নির্বাচনের দিন আমার প্রিয় রঙের নীল জিন্স এবং সাদা জামা পরে যাব।’’ সুমনের কথায়, ‘‘রাস্তাঘাট, আলো, নিকাশি ব্যবস্থার জন্য মানুষ ভোট দেয়। অথচ আমাদের এলাকার তেমন কোনও উন্নতি হয় না বলেই পুরসভার বাসিন্দা হয়েও গ্রামে বাস করি বলে মনে হয়।’’ পুর ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে পঞ্চায়েত চলে যাওয়ায় এলাকায় উন্নয়নে সমস্যা হচ্ছে। অথচ ওয়ার্ড বাড়িয়ে কয়েকটা পঞ্চায়েতকে সঙ্গে নিয়ে এক ছাদের তলায় প্রশাসনিক কাজ হলে মানুষের সুবিধা হবে, এলাকার উন্নয়ন হবে। কিন্তু সে দিকে জনপ্রতিনিধিদের কোনও উদ্যোগই লক্ষ্য করা যায় না বলে অভিযোগ সুমনের। প্রার্থীদের কাছে তাঁর আবেদন, দলাদলি ভুলে মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করলে আমাদের ভোট দেওয়া সার্থক হবে। এলাকার উন্নয়ন হবে।

Advertisement

ইছামতী নদীর কাছে নিকারি পাড়ায় থাকেন রেশমা খাতুন। বসিরহাট কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীটির কথায়, ‘‘নাগরিক হিসাবে নিজের একটা পরিচয় হয়ে ভাল লাগছে। আরও ভাল বিষয় যে এ বার থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে আমরাও সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’’ নির্বাচনের দিন ভোরে উঠে প্রথমে বাড়ির সকলের জন্য লুচি এবং আলুর তরকারি রান্না করবেন তিনি। তারপর সাদা চুড়িদার পরে মা-মাসিদের সঙ্গে গিয়ে ভোট দেবেন বলে জানালেন। প্রার্থীদের প্রতি তাঁর আবেদন, ‘‘আগের তুলনায় বাদুড়িয়ার অনেক উন্নতি হলেও এখনও কিন্তু অনেক কিছুর অভাব রয়েছে। নদী বাঁধ, রাস্তা, বাড়ি বাড়ি পানীয় জল, আলো এবং বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলির উপর আরও জোর দিতে হবে। গরিব মানুষ যাতে নানা প্রকল্পের টাকা পান সেই দিকটাতেও নজর দিতে হবে।’’

এ বারে প্রথম ভোট দিচ্ছে ব্রাহ্মণ পাড়ার সৈকত ঘোষ। পরিচয়পত্র পাওয়ার পর থেকেই ভোট ননিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছেন। সৈকত বলেন, ‘‘কোনও একটা দল জিতবে। তাই বলে যেন অন্যদের সঙ্গে কোনও ভুল বোঝাবুঝি না হয়। এলাকায় চিরদিন সুস্থ ভাবে ভোট হয়েছে এ বারেও যেন তাই হয়। তবে আমার কথা যেই জিতুন না কেন, কেবল রাজনীতি করা নয়, উন্নয়ন‌ করতে হবে। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এলাকা নিয়ে যেন গর্ব করতে পারেন।’’

বাদুড়িয়ার মাঝের পাড়ায় বাড়ি ঋতপা ঘোষ তো প্রথম ভোটার হয়ে রীতিমতো উত্তেজিত। বললেন, ‘‘এত দিন মনে হত, কবে আমি বড়দের মত লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারব। লাল রঙের চুড়িদার বেছে রেখেছি ভোট দিতে যাওয়ার জন্য।’’ শুধু তাই নয় কানে দুল এবং গলায় যে চেন পরে ভোট দিতে যাবেন সেটিও ঠিক করে রেখেছেন ঋতপা। এতদিন ভোট দিতে না পারার অভিমান ভুলে এ বারে সকলকে নিয়ে ভোট দিতে যাবেন তিনি। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা পরিকল্পনা করেছেন ঋতপা। সে দিন বাড়িতে মাংস ভাত রান্নাও করা হবে। খুব করে সাজগোজ করবেন। নতুন প্রজন্মের এই ভোটার চান, ভোটে যে-ই জিতুক, গরিব মানুষের জন্য সঠিক উন্নয়ন যেন হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement