বনগাঁ -বাগদা সড়কের পাশে পড়ে রয়েছে ইমারতী দ্রব্য - বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করছে গাড়িঘোড়া - বনগাঁর ঘাটবাঁওর এলাকায়
একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে বনগাঁ-বাগদা সড়কে। স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রায়ই মৃত্যু হচ্ছে দুর্ঘটনায়। জখমও হচ্ছেন অনেকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত এই সড়কে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ২৩ জন। জখম হয়েছেন বহু মানুষ। পর পর দুর্ঘটনায় পথ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বনগাঁ থেকে বাগদার বয়রা পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। বনগাঁ-বাগদার মধ্যে কোনও রেলপথ নেই। সড়ক পথই ভরসা। বনগাঁ-বাগদা রোডই প্রধান সড়ক। ফলে এই পথে প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। রাস্তা ভাল হওয়ায় যানবাহনের গতি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে দুর্ঘটনা। দিন কয়েক আগে চাঁদা পাঁচমাইল এলাকায় বেপরোয়া গতিতে চলা একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুটিতে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় স্কুটি চালক যুবকের। কয়েক দিন আগে আরও একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক যুবক ও তাঁর বছর সাতেকের ছেলের। স্ত্রী, ছেলে, শ্যালিকাকে নিয়ে বাইকে যাচ্ছিলেন যুবক। কারও হেলমেট ছিল না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ধাক্কা মারে বাইক। চার জনই ছিটকে পড়েন। যুবক ও শিশুটির মৃত্যু হয়। বাকি দু’জন গুরুতর জখম হন। অতীতে একাধিক বার যাত্রীবোঝাই বাস উল্টে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
একের পর এক দুর্ঘটনার কারণ কী?
মানুষজন জানালেন, দিন-রাত বেপরোয়া গতিতে বাইক, ট্রাক, অটো, বাস চলাচল করে এই পথে। মত্ত অবস্থায় বাইক চালান অনেকে। তা ছাড়া, রাস্তার উপরে ইমারতি মালপত্র পড়ে থাকে। এর ফলে সড়ক সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। চাঁদা, গাঁড়াপোতা, হেলেঞ্চা, বাগদা এলাকায় হাট বসে। হাটের দিনগুলিতে সড়কের উপরেই কেনাবেচা চলে। যানজট হয়। যানজটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পরে ফাঁকা রাস্তায় এসে যান চালকেরা গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। তাতেও দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক সংলগ্ন এলাকায় দোকানপাটও বেড়েছে। বাজার বড় হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে আনাজ কিনে ট্রাকে করে বাইরের জেলায় বা ভিন্ রাজ্যে নিয়ে যান। সড়কের পাশে কৃষিজমি বুজিয়ে ট্রাক পার্কিংয়ের জায়গা করা হয়েছে।
বাসিন্দারা জানান, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তার ফলেও দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের অভিযোগ, “পথ দুর্ঘটনা কমাতে পুলিশ-প্রশাসন সম্পূর্ণ উদাসীন।”
পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, পথচারী ও যান চালকদের সচেতন করতে নিয়মিত কর্মসূচি চলে। দুর্ঘটনা কমাতে পদক্ষেপও করা হয় নিয়মিত। রাস্তায় হাম্প, গার্ডরেল দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকে। বাগদা থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টোটো ও অটো নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। বাগদায় আলাদা করে ট্রাফিক গার্ড তৈরি হয়েছে। ট্রাফিক ওসি নিয়োগ হয়েছে। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় ‘ব্ল্যাক স্পট’ বলে চিহ্নিত করে বোর্ড লাগানো হয়েছে। ইমারতি মালপত্র ফেলার বিরুদ্ধেও নিয়মিত ধরপাকড় করা হচ্ছে। হেলমেটহীন বাইক ধরে আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সাধারণ মানুষও যানচালকদেরও সতর্ক হওয়ার আবেদন জানান পুলিশ আধিকারিকেরা।