শ্রাদ্ধানুষ্ঠান চলছে। -নিজস্ব ছবি।
বাবার ইচ্ছে পূরণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন রাখলেন মেয়ে। ক্যানসার আক্রান্ত এক ব্যক্তি চেয়েছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর সৎকার করুক ভিন ধর্মের কোনও মানুষ। কিন্তু মৃত্যুর পর দাহ করার সময় তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তাই বছর ঘুরতেই ইসলাম ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তির হাত দিয়ে প্রয়াত বাবার বাৎসরিক পারোলৌকিক ক্রিয়া করালেন মেয়ে। মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবারের পারুলিয়া উপকূল থানার দেউলপোতার একটি ইট ভাটায় এই বাৎসরিক পারোলৌকিক কাজ করলেন উস্তির দেউলা এলাকার বাসিন্দা সফিউদ্দিন মিদ্দে। দুঃস্থ ভাটা শ্রমিকদের শিশু-সহ পরিবারের লোকজনদের মধ্যাহ্নভোজনেরও ব্যবস্থা করে মৃতের পরিবার।
বেহালার পর্ণশ্রী এলাকার বাসিন্দা মোহন মণ্ডল(৫৯) একটি রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থায় চাকরি করতেন। বছর খানেক আগে ক্যানসারে মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর ইচ্ছে ছিল, মৃত্যুর পর তাঁর সৎকার করুক কোনও মুসলিম ব্যক্তি। কিন্তু তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় ইচ্ছে পূরণ করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে এগিয়ে এলেন বড় মেয়ে পিয়ালি মণ্ডল। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের বাসিন্দা পিয়ালি পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। বেশ কিছু দিন আগে সমাজমাধ্যমে তাঁর আলাপ হয় সমাজকর্মী সফিউদ্দিন মিদ্দের সঙ্গে। সফিউদ্দিনকে বাবার বাৎসরিক পারোলৌকিক ক্রিয়া করতে অনুরোধ করেন পিয়ালি। তিনিও রাজি হয়ে যান। এর পর মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবারের দেউলপোতার একটি ইট ভাটায় পুরোহিত ডেকে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রীতিমতো বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ, খোল, করতাল এবং কীর্তন সহযোগে চলে আচার অনুষ্ঠান। সফিউদ্দিনও ধুতি পরে নামাবলি গায়ে জড়িয়ে বাৎসরিক পারোলৌকিক ক্রিয়ায় অংশ নেন।
এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঘটনার খবর সামাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই প্রশংসার ঝড় ওঠে। বিষয়টি নিয়ে সফিউদ্দিন জানালেন, "এটা রবীন্দ্রনাথ নজরুলের বাংলা। মানবিকতাই আমাদের ধর্ম। আর সেই ধর্মের জোরেই এক মৃত বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সৌভাগ্য হয়েছে আমার। পরম করুণাময়ের কাছে মৃত মোহনবাবুর আত্মার শান্তি কামনা করছি।"