ধৃত নেত্তাবুদ্দিন খান। নিজস্ব চিত্র
জোড়া খুনের দায়ে যাকে খুঁজছে পুলিশ, গা ঢাকা দিতে কলকাতার রাস্তায় মানসিক ভারসাম্যহীন সেজে শুয়েছিল সে। লোকজনের কাছ থেকে হাত পেতে চেয়েচিন্তে খাওয়া-দাওয়া সারছিল ক’দিন ধরে। তবে পুলিশের ধুলো দিতে পারেনি নেত্তাবুদ্দিন খান। শুক্রবার রাতে টালা থানার টালা পার্ক থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ভাঙড়ের কাশীপুর থানার পূর্ব রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা নেত্তাবুদ্দিন সম্পর্কে বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘পাগল সেজে কলকাতায় লুকিয়ে ছিল ২ জনকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি। বিভিন্ন সূত্র মারফত খবর পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নেত্তাবুদ্দিনের বাড়িতে বিভিন্ন লোকজনের আসা যাওয়া ছিল। বাড়িতে প্রায়ই মদ-গাঁজা, জুয়ার আসর বসত। অভিযোগ, জুয়ার টাকা নিয়ে তার এক আত্মীয় মুজিবর মোল্লা ওরফে লাল্টুর সঙ্গে গন্ডগোল হয়। লাল্টু তার কাছে টাকা চাইলে সে ঘোরাতে থাকে। ২৭ জুন লাল্টুকে টাকা দেওয়ার নাম করে বাড়িতে ডেকে আনে নেত্তাবুদ্দিন। সেখানেই কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। এ কাজে তাকে স্ত্রী ওহিদা বিবি সাহায্য করেছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। পুরো ঘটনাটি দেখে ফেলেন নেত্তাবুদ্দিনের ভাইপো রবিউল খান। প্রমাণ লোপাটের জন্য তাকেও কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে সে খুন করে
বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানতে পারে, স্বামীকে বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য করে ওহিদা। নেত্তাবুদ্দিন মাঠ ধরে হেঁটে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায় আশ্রয় চাইতে। তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় সেই বাড়ি থেকে। এরপরেই সে ওই বাড়ির উঠোনে মেলে দেওয়া মেয়েদের নাইটি পরে নেয়। ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে সেখান থেকে পালায় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজে সেই ছবি দেখতে পায়। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সেখান থেকে নেত্তাবুদ্দিন শিয়ালদহ যায়। কাছে টাকা-পয়সা বেশি না থাকায় খুব দূরে যেতে পারেনি। কলকাতার রাস্তায় মাসনিক ভারসাম্যহীনের মতো আচরণ করতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে সে পৌঁছে যায় টালা থানা এলাকায়। পাগল সেজে হাত পেতে চেয়েচিন্তে দিন গুজরান চলছিল। রাতে টালা পার্কের ভিতরে অন্যান্য ভবঘুরেদের সঙ্গে বেঞ্চে শুয়ে রাত কাটাত। ভাঙড়ের এক মহিলা ওই এলাকায় কাজে গিয়ে নেত্তাবুদ্দিনকে দেখে চিনে ফেলেন। তিনি এক আত্মীয়কে বিষয়টি জানান। খবর যায় পুলিশে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কাশীপুর থানার ওসি সমরেশ ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। ঘুমন্ত ভবঘুরেদের মধ্যে নেত্তাবুদ্দিন ঘুমিয়ে ছিল। তাকে ধরে ফেলে পুলিশ।
জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আগেই নেত্তাবুদ্দিনের স্ত্রী ওহিদাকে গ্রেফতার করেছে। এখন সে পুলিশের হেফাজতে। শনিবার নেত্তাবুদ্দিনকে বারুইপুর আদালতে ৯ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশ জানিয়েছে, নেত্তাবুদ্দিন ও তার স্ত্রীকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত কুড়ুল উদ্ধার করার চেষ্টা হবে।
এ দিন পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে নেত্তাবুদ্দিন সাংবাদিকদের জানায়, পাওনার টাকা নিয়ে ঝামেলা করছিলেন লাল্টু। মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিলেন। তাই খুন করেছে। রবিউল তা দেখে ফেলে। তাকেও মেরে দেয় সে।