মহেশতলায় মৃত ছেলের দেহ আগলে মা। নিজস্ব চিত্র।
ছেলে আর বেঁচে নেই, এ কথা মানতেই চান না বৃদ্ধা। ঘরের মধ্যে মৃত ছেলের দেহ আগলে বসে রয়েছেন তিনি। মৃত ছেলেকে খেতে দিচ্ছেন গ্লুকোজ। সোমবার এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মহেশতলা এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহেশতলা থানার অন্তর্গত মহেশতলা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের চককেন্দুয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন বকুল সেনগুপ্ত (৫৮)। স্বামী গত হয়েছেন বেশ কিছু দিন আগে। তার পর থেকেই মা-ছেলে দু’জনের সংসার। কিন্তু সেই ছেলের অকালমৃত্যু কোনও ভাবেই মানতে পারছেন না বৃদ্ধা। তাই এ ভাবে তাঁর দেহ আগলে বসেছিলেন তিনি।
জানা গিয়েছে, আয়কর বিভাগে কর্মরত ছিলেন বকুল। ছেলে কৌশিক তেমন কোনও কাজকর্ম করতেন না। মাদকের নেশাও ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে নেশা করায় অসুস্থ হয়ে ঘরেই থাকতেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, বছর চৌত্রিশের কৌশিকের আধার বা ভোটার কার্ডের মতো কোনও পরিচয়পত্রও ছিল না। এই কারণেই স্থানীয় হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে গেলেও ছেলেকে ভর্তি করাতে পারেননি মা। প্রতিবেশীদের দাবি, গত রবিবার সকাল থেকে মা-ছেলেকে আর বাইরে বেরোতে দেখা যায়নি। কোনও রকম কথা ঘরের বাইরে আসছিল না। তার পর সামনে আসে এই কাণ্ড।
রবিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ পাড়ার কয়েক জন যুবক ওই বাড়িতে যান। ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখেন একটা চর্মসার দেহ পড়ে রয়েছে বিছানায়। তার কোনও নড়াচড়া নেই। তাকেই গ্লুকোজ খাইয়ে চলেছেন বৃদ্ধা। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে সেই গ্লুকোজ। তবু বৃদ্ধা ছেলেকে খাইয়ে চলেছেন। জিজ্ঞাসা করলে বৃদ্ধা নাকি জানান, ছেলে ঠিকই খাচ্ছে। এখন একটু ঘুমিয়ে পড়েছে। এই দৃশ্য দেখে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যান প্রতিবেশীরা। তড়িঘড়ি স্থানীয় কাউন্সিলর মুকুল মণ্ডলকে খবর পাঠানো হয়। তিনি নিজের উদ্যোগে একজন ডাক্তার ডেকে আনেন। তার পর ওই বৃদ্ধা ছাড়া বাকি সবাই নিশ্চিত হন কৌশিক মারা গিয়েছেন। সেটাও অন্ততপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে।
সোমবার সকাল ১১ টা নাগাদ মৃতের মাকে জানিয়ে মহেশতলা থানা এবং কাউন্সিলরের উদ্যোগে আকরা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। যদিও মায়ের বিশ্বাস, ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছেন প্রতিবেশীরা।