প্রতীকী ছবি
ইতিমধ্যে দু’টি সেফ হোম চালু রয়েছে। সোমবার থেকে চালু হচ্ছে আরও একটি। সেফ হোমের সংখ্যা বাড়িয়েই আপাতত করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছে বারুইপুর মহকুমা প্রশাসন।
বারুইপুর হাসপাতালকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে বেশ কয়েক বছর হল। কলকাতা লাগোয়া সোনারপুর, নরেন্দ্রপুর থেকে শুরু করে সুন্দরবন লাগোয়া জয়নগর, কুলতলি মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ চিকিৎসার জন্য অনেকাংশেই এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এই মহকুমায় কোনও কোভিড হাসপাতাল করেনি সরকার। মহকুমা হাসপাতালে চারটি ভেন্টিলেটর রয়েছে। তবে তা করোনা আক্রান্ত রোগীর ব্যবহারের জন্য নয়।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এই মহকুমার করোনা আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাঙ্গুর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে ক্যানিং স্টেডিয়ামে অস্থায়ী কোভিড হাসপাতালেও।
তবে এই মূহূর্তে বাড়িতে বা সেফ হোমে রেখে চিকিৎসার দিকেই জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। মহকুমা হাসপাতাল ও ব্লক হাসপাতালগুলিতে লালারস সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। চালু হয়েছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টও। রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে রোগীর কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, তিনি বাড়িতে থাকতে চান কিনা। বাড়িতে আলাদা থাকার পরিকাঠামো থাকলে তাঁকে বাড়িতেই নিভৃতবাসে থাকতে বলা হচ্ছে। আর সেই পরিকাঠামো না থাকলে পাঠানো হচ্ছে সেফ হোমে।
জয়নগরের মোমরেজগড়ে ৫০ শয্যার একটি সেফ হোম চালু হয়েছে কিছু দিন আগে। সম্প্রতি সেখানে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ভাঙড় ২ ব্লকের ভোগালিতেও দিন কয়েক আগে ৫০ শয্যার একটি সেফ হোম চালু করা হয়। সোমবার থেকে বারুইপুরের সীতাকুণ্ড সংলগ্ন কিসান মান্ডিতে ৫০ শয্যার আরও একটি সেফ হোম চালু করতে চলেছে প্রশাসন। বারুইপুরের মহকুমাশাসক দেবারতি সরকার বলেন, “ইতিমধ্যেই আমাদের দু’টি সেফ হোম রয়েছে। আরও একটি চালু করা হচ্ছে। সেফ হোমগুলিতে কোনও রোগী বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে স্থানান্ততরিত করা হচ্ছে। সে জন্য অ্যাম্বুল্যান্স-সহ অন্য ব্যবস্থা তৈরি থাকছে। করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগী পরিবহণের জন্য আপাতত আমাদের হাতে পাঁচটি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আরও অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য আবেদন করা হয়েছে।”
তবে বারুইপুরের মতো এত বড় একটি মহকুমায় আলাদা কোভিড হাসপাতাল প্রয়োজন বলেই মনে করছেন অনেকে। জয়নগরের পুরপ্রশাসক তথা কংগ্রেস নেতা সুজিত সরখেল বলেন, “জয়নগর থেকে বাঙ্গুরের দুরত্ব অনেকটাই। এখান থেকে রোগীকে নিয়ে যাওয়া সমস্যা। তার উপরে শয্যা পাওয়ার সমস্যা রয়েছে। এখান থেকে বাঙ্গুরে নিয়ে গিয়ে শয্যা না পেয়ে ফেরত এসেছেন, এমন ঘটনা ঘটেছে। যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে বারুইপুর বা সংলগ্ন এলাকায় একটি আলাদা কোভিড হাসপাতালের খুবই প্রয়োজন। ব্লক হাসপাতালগুলিতেও কিছু শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য বরাদ্দ করা যেতে পারে।”
সিপিএম নেতা তথা বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “কোভিড চিকিৎসার পরিকাঠামো তৈরিতে সরকার ব্যর্থ। আরও হাসপাতাল দরকার। মানুষ প্রয়োজনে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বহু দূরে ছুটে গিয়েও দেখা যাচ্ছে, শয্যা নেই। তা হলে দিকে দিকে এত মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করে লাভ কী হল! অপদার্থতা ঢাকতে এই সরকার কন্টেনমেন্ট জ়োন, সেফ হোম— এই সব করে যাচ্ছে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখন দেখা যাচ্ছে অনেক কোভিড পজ়িটিভ রোগীই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত। ফলে আমরা সেফ হোমে রেখে চিকিৎসার উপরেই জোর দিচ্ছি। সে কারণেই বারুইপুর মহকুমা এবং সংলগ্ন এলাকায় সেফ হোমের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তবে কোনও রোগী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও থাকছে।”
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)