নির্মাল্য সেনগুপ্তের সঙ্গে মহম্মদ শামি। —ফাইল চিত্র।
কয়েক বছর আগে উত্তরপ্রদেশ থেকে ক্রিকেট প্রশিক্ষক বদরউদ্দিন ফোন করেছিলেন বনগাঁ শহরের বাসিন্দা অপু সেনগুপ্তকে। ক্রিকেট প্রশিক্ষক হিসাবে নির্মাল্য ওরফে অপুর নামডাক আছে। ‘বনগাঁ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’ চালান তিনি। ক্ষুদে প্রতিভা তুলে আনার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকার কথা ক্রিকেট মহলে কমবেশি সকলেই জানেন। ভিন্ রাজ্যের, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ থেকে ছোট ছোট ছেলেদের অভিভাবকেরা অপুর কাছে ছেলেদের পাঠান বড় ক্রিকেটার করার স্বপ্ন নিয়ে। অপুর কাছেই প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত অভিমন্যু ঈশ্বরন, অভিষেক রমনেরা।
উত্তরপ্রদেশের আমরোহা জ়োনের অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলের ট্রায়াল হয়েছিল কিছু বছর আগে। সেখানে একটি ছেলেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। অপু বলেন, ‘‘সে দিন ফোনে বদরউদ্দিন বলেছিলেন, একটি প্রতিশ্রুতিমান ছেলে আছে। কোথাও সুযোগ পাচ্ছে না। তুমি দেখো, কিছু করা যায় কি না। পরে ছেলেটির বাবাও ফোন করেন। এরপরেই আমি ছেলেটিকে কলকাতায় আনার ব্যবস্থা করেছিলাম। বাকিটা সকলেই দেখছেন।’’
সেই ছেলেরই আগুনে পেস বোলিংয়ে ভর করে তৃতীয় বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। ছেলেটির নাম, মহম্মদ শামি।
সেমিফাইনালে ৭ উইকেট নিয়ে প্রায় একা হাতেই নিউ জ়িল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়েছিলেন। তারপর থেকেই শামিকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ চড়ছে। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন অপুও। যিনি নিজেকে শামির আবিষ্কারক হিসাবে মনে করেন। বিশ্বকাপের মধ্যেই কয়েক দিন আগে শামির সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে বলে জানালেন অপু। অপু বলেন, ‘‘আজ এই উচ্চতায় পৌঁছেও মানসিকতার কোনও পরিবর্তন হয়নি ছেলেটার। দিন কয়েক আগে ফোন করলে বলেছিল, দুয়া কিজিয়ে স্যর।’’
অপু মনেপ্রাণে চাইছেন, রবিবার আমেদাবাদে বিশ্বকাপের ফাইনালে শামির প্রতিভা জ্বলে উঠুক। অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিংলাইনকে শামি ধ্বংস করুন বিধ্বংসী বোলিংয়ে। উত্তরপ্রদেশ থেকে আসার পরে কী ভাবে এগিয়োছিল শামির ক্যারিয়ার? স্মৃতিতে ডুব দিয়ে অপু বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ থেকে আনার পরে ত্রিপুরার স্টার ক্লাবে শামির খেলার ব্যবস্থা করি। কিন্তু ওরা বেশি দিন সুযোগ না দিয়ে বাতিল করে দেয়। এরপরে কলকাতার কয়েকটি ক্লাবে শামিকে নিয়ে গেলেও তারা সুযোগ দেয়নি।’’ অপু জানান, বন্ধু শ্রীমন্ত হাজরার সাহায্যে শামিকে ডালহৌসি ক্লাবে সুযোগ করে দিতে পেরেছিলাম। শর্ত ছিল, ভাল খেললে তবেই শামিকে সুযোগ দেওয়া হবে। খালি পায়ে শামি ডালহৌসি ক্লাবে ট্রায়াল দিয়েছিলেন। তার বোলিং দেখে সকলে মুগ্ধ হন। কয়েক বছর সেখানে খেলেন। এরপরে যান টাউন ক্লাবে। অপুর কথায়, ‘‘টাউন ক্লাব থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয়, শামিকে তাদের ক্লাবে খেলানোর ব্যবস্থা করতে। শামি প্রথমে ডালহৌসি ক্লাব ছাড়তে রাজি ছিলেন না। আমি ওঁকে বলি, আমি কথা দিয়ে ফেলেছি। শামি রাজি হয়ে যান। শামিকে টাউন ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে একটি ঘাস কাটার মেশিন দেওয়া হয়েছিল। বাকিটা ইতিহাস।’’ অপু জানালেন, বনগাঁ শহরে তাঁর বাড়িতেও শামি একাধিক বার এসেছেন। বনগাঁর সঙ্গেও শামির সম্পর্ক আছে। কয়েক বছর আগে অপুর মাধ্যমে শামি বনগাঁ প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে নদিয়ার রানাঘাটে একটি প্রতিযোগিতায় যোগদান করেন। ক্রিকেটার তথা প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য শুভম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মনে আছে, কলকাতায় গিয়ে আমরা শামির সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সে সময়ে লিগের খেলা চলছিল। বিরতিতে কথা বলেছিলাম। কলকাতা থেকে ট্রেনে করে শামি রানাঘাট গিয়েছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটি খেলেছিলেন। আমিও সেই ম্যাচে খেলেছিলাম। ম্যাচটিতে আমরা জয়ী হয়েছিলাম। পারিশ্রমিক হিসাবে শামি কোনও টাকা চাননি। আমরা ওঁকে ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম।’’