রাজনৈতিক ডামাডোলে শিকেয় উঠেছে পড়াশোনা

ভাঙিপাড়ায় তালা বন্ধ স্কুল

সন্দেশখালির ভাঙিপাড়ায় নলকোড়া জুনিয়র বেসিক স্কুলের এখন এই অবস্থা। ৮ জুন এই স্কুল চত্বরেই সভা ছিল তৃণমূলের। সভা শেষে মিছিল বেরোয়। তখনই শুরু হয় গোলাগুলি, বোমবাজি।

Advertisement

নির্মল বসু

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৯ ০১:২২
Share:

বন্ধ: বেশির ভাগ সময়েই তোলা ঝোলে নলকোড়া স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

দমচাপা পরিবেশটা কবে কাটবে, কেউ জানে না।

Advertisement

তাই সন্ধে নামতে না নামতেই দোকানে ঝাঁপ ফেলে দেন ব্যবসায়ী। রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে বেরেনোর সাহস না মানুষজন। গ্রামের মোড়ে মোড়ে অলস আড্ডাটাও উধাও। কাজ সেরে কে কতক্ষণে বাড়ি ঢুকবেন, শুধু সেই তাড়া। সকাল-বিকেল ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হইচই ভেসে আসত যে স্কুল থেকে, তা-ও এখন বেশির ভাগ সময় তালা বন্ধ। মাঝে মধ্যে দু’চার জন পড়ুয়া আসে বটে। কিন্তু তা-ও নেহাতই অনিয়মিত। মাস্টারমশাই-দিদিমনিরা চাকরির তাগিদে আসেন। কিন্তু ক্লাস আর হয় কোথায়! ৭৪ জন ছেলেমেয়ের বেশিরভাগই তো গত দেড় মাস স্কুলমুখো হয় না।

সন্দেশখালির ভাঙিপাড়ায় নলকোড়া জুনিয়র বেসিক স্কুলের এখন এই অবস্থা। ৮ জুন এই স্কুল চত্বরেই সভা ছিল তৃণমূলের। সভা শেষে মিছিল বেরোয়। তখনই শুরু হয় গোলাগুলি, বোমবাজি। বিজেপি-তৃণমূলের সংঘর্ষ বেধে যায়। নিহত হন তিনজন। কয়েকজন নিখোঁজ। বোমাবাজির মধ্যে পড়ে ভয়ে পালিয়েছিল ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। তারপর থেকে কাটেনি আতঙ্ক। স্কুল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে নিহত দুই বিজেপি কর্মীর বাড়ি। নিখোঁজ দেবদাস মণ্ডলের মেয়ে ঝুমা নলকড়া স্কুলেই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। নিহত প্রদীপ মণ্ডলের দুই ছেলেও পড়ে ওই স্কুলে। কাউকেই স্কুলে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকেরা।

Advertisement

গ্রামে পুলিশ মোতায়েন আছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ বলছেন, সে দিনও তো মিছিলের সঙ্গে পুলিশ ছিল। কিন্তু খুনোখুনি কি এড়ানো গেল তাতে!

ভাঙিপাড়ার ওই স্কুলে ৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। ছাত্র-শিক্ষক দু’পক্ষই ভয়ে ভয়ে আছেন। নাম জানাতে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘চাকরি সূত্রে এখানে আসা-যাওয়া করি। সংঘর্ষে মৃত, নিখোঁজ সকলেই পরিচিত। ঘটনার পর থেকে এখনও ভয় না কাটায় অভিভাবকদের পক্ষে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। জানি না কবে গ্রামের পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক হবে।’’ ছাত্রছাত্রীরা না আসায় বেশির ভাগ সময় স্কুলে তালা ঝোলানো থাকে। তবে নিয়মিত হাজিরা দিতেই হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। যদিও ভয়ে ভয়ে থাকেন তাঁরা। এক শিক্ষিকা আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে আসেন। আর এক শিক্ষিকা ভাঙিপাড়ায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সে দিনের ঘটনার পরে বাড়ির মালিক-সহ সকলে ঘরছাড়া। ওই শিক্ষিকা এখন কলকাতার বাড়ি থেকেই যাতায়াত করছেন। এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘এ ভাবে ছেলেমেয়েগুলোর সিলেবাস শেষ হবে না। সময় মতো পরীক্ষা না হলে কী যে হবে, কে জানে!’’

গ্রামের বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল, রত্না মণ্ডলের কথায়, ‘‘স্কুলে মিড ডে মিল রান্না করতেন যাঁরা, সেই সব মহিলাদের কেউ কেউ ভয়ে গ্রামছাড়া। কবে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কে জানে!’’

এক সময়ে শিশুদের কলরবে সরগরম থাকত স্কুল। এখন সব চুপচাপ। দোলনা, স্লিপে ধুলোর পুরু আস্তরণ। গ্রামে কান পাতলে বহু বাড়ি থেকে এখনও ভেসে আসে চাপা কান্না।

ছন্দে ফিরতে চেয়েও পারছে না ভাঙিপাড়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement