দলীয় সভায় গরহাজির বুথ সভাপতিরা। প্রতীকী চিত্র।
তৃণমূলের সভায় অনুপস্থিত থাকলেন ব্লকের বেশিরভাগ বুথ সভাপতি। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা ব্লকে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ জেলা নেতৃত্ব। বুথ সভাপতিদের গরহাজিরার কারণ খুঁজে রিপোর্ট দিতে ব্লকের দুই সভাপতিকে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। পাশাপাশি, ‘নিষ্ক্রিয়’ বুথ সভাপতিদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচি নিয়ে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় আসার কথা। ওই কর্মসূচি ঘিরে ব্লক ধরে ধরে প্রস্ততি সভা হচ্ছে। একই সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে সভাগুলি থেকে। এ দিন বাগদার হেলেঞ্চা হাই স্কুলে বাগদা ব্লকের নেতৃত্বদের নিয়ে সভা করা হয়। জেলা নেতৃত্ব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের বাগদা পশ্চিম এবং পূর্ব ব্লকের সভাপতি।
কিন্তু ব্লকে দলের ২৪১ জন বুথ সভাপতির ৫০ শতাংশেরও কম উপস্থিত ছিলেন। বক্তৃতা করতে উঠে তা দেখে ক্ষুব্ধ হন বিশ্বজিৎ। বলেন, “অনিচ্ছুক বুথ সভাপতিদের পদ থেকে সরিয়ে দিন। দলে বুথ সভাপতিদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা ব্যবস্থা না দিলে আগামী দিনে দল কড়া পদক্ষেপ করবে।”
কেন ব্লকের বেশিরভাগ বুথ সভাপতি অনুপস্থিত থাকলেন?
রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, বুথ সভাপতিদের উপরে নেতৃত্বের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। দলে সাংগঠনিক অনুশাসন না থাকায় কিছু বুথ সভাপতি বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছেন। অনেকে আবার মনে করছেন, তাঁরা দলের কাছে অপরিহার্য। তাঁদের বাদ দিয়ে বুথে দল চলবে না বা ভোটে জেতা সম্ভব নয়। ফলে সভায় না গেলেও তাঁদের চলবে।
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই ঘটনায় বাগদায় আরও এক বার গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে চলে এল। অনেক বুথ সভাপতি নাকি সভার বিষয়ে অবগতই ছিলেন না! এক বুথ সভাপতির কথায়, “আমি ব্লক সভাপতির কাছের মানুষ নই, তাই আমাকে সভার খবর দেওয়া হয়নি।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক বুথ সভাপতিকে দলে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বুথ সভাপতিকে বাদ দিয়ে বুথের অন্য কোনও কর্মীকে নেতৃত্ব গুরুত্ব দেন বলে অভিযোগ। বাগদা ব্লক নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, খেতে ধান কাটায় ব্যস্ত থাকায় অনেকে সভায়
আসতে পারেননি। তবে সকলকে সভায় আসার বিষয়ে জানানো হয়েছিল।
এ দিকে, জেলা সভাপতির ‘কড়া বার্তা’ পেয়ে নড়চড়ে বসেছেন তৃণমূলের বাগদা ব্লকের দুই সভাপতি। বাগদা পূর্ব ব্লকের সভাপতি পরিতোষ সাহা রবিবার বিকেলে নিজের অফিসে বুথ সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন। তিনি বলেন, “বাগদা পূর্ব ব্লকে তৃণমূলের বুথ সভাপতি ১১৫ জন। তাঁদের নিয়ে বৈঠক হবে। কোনও বুথ সভাপতি নিষ্ক্রিয় আছেন কি না, তা দেখা হবে। থাকলে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে।” বাগদা পশ্চিম ব্লকে বুথ সভাপতির সংখ্যা ১২৬। এই ব্লকের সভাপতি অঘোরচন্দ্র হালদার বলেন, “কেন বুথ সভাপতিরা সভায় আসেননি, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বাগদার বিজেপি নেত্রী বিভা মজুমদার বলেন, “সভায় বেশিরভাগ বুথ সভাপতির অনুপস্থিতি প্রমাণ করছে, তাঁরা দলের নির্দেশ মানেন না। বাগদায় তৃণমূলের মধ্যে তিনটি গোষ্ঠী। তারই ফল এমন। শুনলাম, তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলেছেন বুথ সভাপতিদের সরিয়ে দিতে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে তৃণমূলের বুথ সভাপতিদের মানুষের কাছে আর গ্রহণযোগ্যতা নেই।” বাগদা ব্লক কংগ্রেস সভাপতি প্রবীর কীর্তনিয়া বলেন, “তৃণমূল দলটা এখন কেউ আর করতে চাইছে না। যাঁদের টিকিটের লোভ আছে, তাঁরাই শুক্রবার সভায় গিয়েছিলেন।”