প্রতীকী ছবি।
কাঠচোরেদের দৌরাত্ম্যে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের বহু এলাকায়। রায়দিঘির নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের ঠাকুরান নদীর চরে সাহেবের দ্বীপের জঙ্গলের কাঠ চুরির ঘটনা নিয়ে বন দফতরকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে দমকল পুরকাইতপাড়ার পাশেই ঠাকুরান নদী। নদীর উল্টো দিকের চরে সাহেবের দ্বীপের জঙ্গল। প্রায় ১৬ হাজার বিঘা ওই জঙ্গলটি মণি, ঠাকুরান, মাতলা ও বিদ্যাধরী নদীর চর বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। বহু বছরের পুরনো ওই জঙ্গলে রয়েছে বাণী, কেওড়া, গর্জন, তরা, হেঁতাল-সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। প্রত্যেক বছর শীতের মরসুমে ঠাকুরান নদী লাগোয়া দমকল পুরকাতাইতপাড়া, চ্যাটার্জিপাড়া ও পূর্ব শ্রীধরপুরের কিছু মানুষ ছোট নৌকোয় করে নদী পার হয়ে অবাধে কাঠ কাটছে বলে অভিযোগ। সকালবেলায় দল বেঁধে নৌকোয় করে গিয়ে কাঠ কেটে রেখে আসে তারা। রাতে সেই কাঠ পার করে আনে। আর ওই চোরাই কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে ইটভাটা, মিষ্টির দোকান বা হোটেলে জ্বালানির কাজে।
বাসিন্দারা জানালেন, বহু বছরের পুরনো সাহেবের দ্বীপের জঙ্গলে বড় বড় গাছ ছিল। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ওই জঙ্গলে পরিযায়ী পাখি ছাড়াও বক, কাক, মাছরাঙা পাখিরা বাসা বাঁধত। পাখিদের কলকাকলি দূরদূরান্ত থেকে শোনা যেত। পর্যটকেরাও ভিড় জমাতেন সেই টানে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে যেত। সে ছিল এক মনোরম পরিবেশ। এমনকী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বাঁধ বাঁচাতে ওই জঙ্গলই অন্যতম ভরসা। কিন্তু কাঠ চোরেদের দৌরাত্ম্যে বড় বড় পুরনো গাছ কাটা পড়েছে। সেই কাটা গাছের গোড়া থেকে আবার নতুন করে কিছু গাছ গজিয়ে উঠে কোনওরকমে জঙ্গল হয়ে রয়েছে। এখন ওই গজিয়ে ওঠা ছোট-বড় গাছও নির্বিচারে কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের।
দমকল গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন গাজির অভিযোগ, ‘‘প্রতিদিন সকালে দল বেঁধে নৌকোয় করে গিয়ে কিছু লোক গাছ কেটে রেখে আসে। রাত হলেই আবার কাটা গাছ নিয়ে আসে এ পারে। ১২০ টাকা কিলো প্রতি ওই চোরাই কাঠ বিক্রি হচ্ছে। ইটের পাঁজা পোড়ানো ছাড়াও মুড়ি ভাজার মিলে চালান হয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের চোরাই কাঠ। গ্রামে রাস্তার পাশে চোরাই কাঠ স্তূপ করে রেখে দিয়ে তার উপরে খড় বা প্লাস্টিক ঢাকা দিয়ে রাখছে। হামেশাই জঙ্গলের কাঠ চুরি বন্ধ করতে রায়দিঘি রেঞ্জারকে একাধিক বার জানিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তিনি।’’
এ বিষয়ে রায়দিঘি রেঞ্জার জয়দেব মিস্ত্রি বলেন, ‘‘সাহেবের দ্বীপ জঙ্গলে নিয়মিত বন দফতর থেকে টহলদারি চলছে। কিছু দিন আগেও দমকল গ্রামের ইটের পাঁজার ভিতরে লুকিয়ে রাখা চোরাই কাঠ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ফের খতিয়ে দেখা হবে বিষয়টি।’’