প্রতীকী চিত্র।
দেড় লক্ষ টাকার জরিমানা রফা হয়েছিল ২৫ হাজারে। শেষ পর্যন্ত অত্যাচারের ভয়ে ২০ হাজার টাকা নিজের ভাইপোর মাধ্যমে প্রভাবশালীদের কাছে পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন শাসনের সর্দারহাটিতে নিগৃহীত সেই ব্যক্তি। এর জন্য তাঁকে বন্ধক রাখতে হয় জমি, বিক্রি করে দিতে হয় বাড়িতে রাখা ধান। তবে বিষয়টি জেনে স্থানীয় বিধায়ক তৎপর হওয়ায় সোমবার রাতেই সেই টাকা ফিরিয়ে দেয় অভিযুক্তেরা।
শনিবার বিকেলে শাসনের সর্দারহাটির বিশ্বাসপাড়ায় ওই ব্যক্তি এবং এক মহিলাকে গাছে বেঁধে নিগ্রহ করে একদল প্রভাবশালী। সে দিন শাসন থানা দাবি করেছিল, এমন কোনও ঘটনার কথা তাদের কানে পৌঁছয়নি। সোমবার অবশ্য এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিগৃহীত ব্যক্তি এ দিন বলেন,
‘‘ভাইপোর মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে ছিলাম। এর জন্য চার কাঠা জমি বন্ধক রাখতে হয়েছে। বিক্রি করতে হয়েছে ঘরে রাখা ধান। তবে বিধায়ককে ধন্যবাদ। ওঁর জন্য টাকা ফেরত পেয়েছি।’’
শনিবারের ঘটনা জানার পরে স্থানীয় হাড়োয়া বিধানসভার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম সর্দারহাটিতে ফোন করে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোনও রকম জরিমানা যেন আদায় করা না হয়। কিন্তু তার পরেও নিগৃহীত ব্যক্তিকে যে টাকা দিতে হয়েছিল, তা শুনে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অন্ধকারে রেখে কিছু লোক জরিমানা আদায়ের নামে এমন কাজ করছে। আমরা তাদের সমর্থন করি না। কারা ওই ব্যক্তির থেকে টাকা নিয়েছিল, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
উল্লেখ্য, নিগৃহীত ওই ব্যক্তি তৃণমূলের বহু পুরনো কর্মী। যে বছর প্রথম তৃণমূল নির্বাচনে লড়ার প্রতীক পায়, সেই বছর শাসন পঞ্চায়েতে দলের হয়ে ভোটে লড়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে জিতেছিলেন তিনি। এ দিন ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘সেই সময়ে এলাকায় মজিদ মাস্টারের নেতৃত্বে সিপিএমের দারুণ প্রভাব। ভোটে লড়ার প্রার্থী ছিল না তৃণমূলের। মমতাদি দিল্লি থেকে প্রতীক নিয়ে ফিরলেন। সেই প্রতীক নিয়ে আমি ভোটে দাঁড়ালাম। পরে অবশ্য আর লড়িনি। মানুষের সঙ্গে দলের কিছু নেতা-কর্মীর দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় আমাকে অনেক দিন বসিয়ে রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি ওই নেতারা ডাকলেও আমি যাইনি। তাই হয়তো এ ভাবে হেনস্থা করা হল।’’
স্থানীয়দের বড় অংশের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরেই শাসনে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মদতে জরিমানার নামে তোলাবাজি চলছে। যার লক্ষ্য মূলত বিরোধী দলের লোকজন, অথবা শাসক দলের বিরোধী গোষ্ঠী। প্রায় ১১ বছর ঘরছাড়া শাসন থানার দাতপুর পঞ্চায়েতের পাকদা গ্রামের বাসিন্দা কুতুবুদ্দিন আহমেদ। সিপিএমের বারাসত দক্ষিণ-১ এর এরিয়া কমিটির সম্পাদক কুতুবুদ্দিন বলেন, ‘‘শাসনের সাতটি পঞ্চায়েত এলাকা মিলিয়ে ৭০-৮০ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। কারও বাড়ি বন্ধ করা হয়েছে, কারও দোকান। গরিব মানুষ বাইরে বাড়ি ভাড়া দিতে পারেন না। বাধ্য হয়ে জরিমানা দিয়ে গ্রামে ফিরছেন। সহরা গ্রামে ১৫টি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ১১টি খুলেছে। প্রত্যেককে জরিমানা দিয়ে দোকান খুলতে হয়েছে।’’
যদিও বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ঘরছাড়া হওয়ার অভিযোগ পেলে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের কাছে জরিমানা নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। যাঁরা জরিমানা দিচ্ছেন, তাঁরা থানায় অভিযোগ করছেন না কেন?’’