প্রতীকী ছবি।
সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ- কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের কবলে পড়লেন এক মৎস্যজীবী। যামিনী মিস্ত্রি নামে ওই মৎস্যজীবীকে তুলে নিয়ে যায় বাঘে। শুক্রবার বেলা ৩টে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের পঞ্চমুখানি দু’নম্বর জঙ্গলের কাপুড়া নদীর তীরে।
বছর তেইশের ছেলে মিলন, অজিত মণ্ডল ও অসিত মাঝিকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার সকালে গোসাবার লাহিড়িপুর গ্রাম থেকে মাছ কাঁকড়া ধরার জন্য সুন্দরবনের জঙ্গলে গিয়েছিলেন যামিনী। দীর্ঘ দিন ধরেই সুন্দরবনের নদীতে মাছ-কাঁকড়া ধরেই জীবন যাপন করেন তিনি। এর আগেও সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের সামনে পড়েছিলেন। তবে বড় কোনও বিপদ হয়নি। কিন্তু এ বার তা-ই ঘটে গেল।
পরিবার সূত্রের খবর, বেলা ৩টে নাগাদ যখন মাছ-কাঁকড়া ধরা শেষ করে বাড়ি ফিরবেন ভাবছেন, তখনই একটি বাঘ জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে যামিনীর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘাড়ে কামড় বসিয়ে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায়। চিৎকার শুনে অন্যান্য সঙ্গীদের সঙ্গে মিলনও লাঠি নিয়ে বাঘের দিকে তেড়ে যান। কিন্তু রক্তাক্ত যামিনী ততক্ষণে প্রায় নিস্তেজ। তাঁকে মুখ থেকে ছেড়ে মিলন ও তাঁর সঙ্গীদের দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার ছাড়ে বাঘ। ঘাবড়ে গিয়ে পিছু হটেন সকলে। ফের যামিনীরা ঘাড়ে কামড় বসিয়ে টানতে টানতে তাঁকে জঙ্গলের দিকে টেনে নিয়ে যায় দক্ষিণরায়। মিলনের আফসোস, ‘‘চোখের সামনেই বাবাকে তুলে নিয়ে গেল বাঘটা। কিছুই করতে পারলাম না।’’ অজিত বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে আসব বলে ভাবছিলাম। নৌকো থেকে পাড়ে নেমে জাল গোটাচ্ছিল যামিনী। সে সময়েই বিপদ ঘটল।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম বাঘকে ধাওয়া করতে। কিন্তু এমন হুঙ্কার ছাড়ল, আর সাহস করিনি।’’
ঘটনার পরে সকলে গ্রামে ফিরে আসেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়ে যামিনীর পরিবার। স্ত্রী দেবী বলেন, ‘‘না খেয়ে মরে যাব, তবু ছেলেদের আর জঙ্গলে যেতে দেব না।’’ বন দফতর সূত্রের খবর, সরকারি অনুমতি ছাড়াই সুন্দরবনের জঙ্গল, নদী খাড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল দলটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বনকর্তা বলেন, ‘‘যামিনীর খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’’