‘এই পাড়ায় যাঁরা শব্দবাজি ফাটিয়েছেন, তাঁদের অভিনন্দন’

লেখাটি তিনি লিখেছেন এলাকার বাসিন্দাদের ধন্যবাদ জানিয়ে। তবে এ ধন্যবাদ সে ধন্যবাদ নয়। গত রবি ও সোমবার যাঁরা লাগাতার শব্দবাজি ফাটিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্টার সেঁটেছেন সীমান্তবাবু।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১৮
Share:

ব্যঙ্গ: বাড়ির মূল ফটকে এই পোস্টারই লাগিয়েছেন সীমান্তবাবু। মঙ্গলবার, পলতায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

রাস্তার ধারে সদর দরজায় ঝোলানো একটি সাদা কাগজ।

Advertisement

আসতে-যেতে অনেকেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন তার সামনে। কাগজে লেখা কথাগুলো পড়ে ফের হাঁটা দিচ্ছেন। বাড়ির মালিক সীমান্ত গুহঠাকুরতা সেটাই চান। সকলে অন্তত লেখাটি পড়ুন।

লেখাটি তিনি লিখেছেন এলাকার বাসিন্দাদের ধন্যবাদ জানিয়ে। তবে এ ধন্যবাদ সে ধন্যবাদ নয়। গত রবি ও সোমবার যাঁরা লাগাতার শব্দবাজি ফাটিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্টার সেঁটেছেন সীমান্তবাবু। পলতার কালিয়ানিবাস স্কুল রোডের ওই ছোট্ট বাড়িটার সামনে মঙ্গলবার সকাল থেকে তাই থমকে দাঁড়াচ্ছেন অনেকেই।

Advertisement

পোস্টারে সীমান্তবাবু লিখেছেন, ‘এই পাড়ায় যাঁরা শব্দবাজি ফাটিয়েছেন, তাঁদের অভিনন্দন। আমি হার্টের রোগী। পাড়ায় অনেক দুধের শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন। আমরা সবাই খুবই কষ্ট পেয়েছি। এ রকম সহানুভূতিহীন আচরণের জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।’

সীমান্তবাবু হুগলির বৈঁচি এলাকার একটি স্কুলের শিক্ষক। বংশপরম্পরায় স্কুল রোডেই বাস তাঁদের। তাঁর অভিযোগ, গত রবি ও সোমবার রাতে দেদার শব্দবাজি ফেটেছে তাঁর পাড়ায়। বাড়ির পাশের একটি খালি জমি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই ফাঁকা জায়গায় কে বা কারা লাগাতার বাজি ফেলে যাচ্ছিল। বাইরে বেরিয়ে কাউকে দেখতি পাইনি। কখনও উপর থেকে আসছে, কখনও অন্য কোনও দিক থেকে। শেষ পর্যন্ত ঘরে বন্দি থেকে রাতভর কষ্ট ভোগ করেছি।’’

কেমন সে কষ্ট? সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন সীমান্তবাবু। গত বছর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। অস্ত্রোপচার হয়। ‘স্টেন্ট’ বসেছে হৃদ্‌যন্ত্রে। ‘গত কাল (‌সোমবার) মাঝরাতে গোটা পাড়া জুড়ে ফ্ল্যাটবাড়িগুলোর ছাদে একের পর এক শেল ফাটছে, প্রবল শব্দে দিগ্বিদিক প্রকম্পিত। আমার শিশুপুত্রটি বারবার ঘুম ভেঙে কেঁদে উঠেছে। মনে হচ্ছে হৃৎপিণ্ডটা বুঝি এ বার চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। ডাক্তারের শিখিয়ে দেওয়া মাসল রিল্যাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করে বড় বড় শ্বাস নিয়ে প্যানিক কমানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তবু বুকে ব্যথা কমছে না।’ লিখেছেন সীমান্তবাবু।

ওই পাড়ার বাসিন্দা রত্না ভট্টাচার্যও শব্দ-তাণ্ডবের শিকার। তিনি বললেন, ‘‘এখানেই আমাদের পুজো। কিন্তু পাশের বাড়িতে ৮০ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধা। তাই আমরা কোনও সাউন্ড বক্সও ব্যবহার করিনি। কিন্তু সোমবার রাতে যে ভাবে তাণ্ডব চলল, তাতে নিরাপদ বোধ করছি না। মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেও মাথা ব্যথা কমেনি।’’

যে বাড়িতে ৮০ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধ, সেই বাড়ির মহিলা মলি গুপ্ত অবশ্য বললেন, ‘‘তেমন বাজি অবশ্য ফাটেনি। দূরে ফাটলেও তেমন কোনও অসুবিধা আমাদের হয়নি।’’ অথচ সীমান্তবাবুর পাশের বাড়িটিই তাঁদের। মলিদেবী জানালেন, তাঁর ছেলের বয়স ২০ বছর। কিন্তু তিনি বাড়িতে বা অন্য কোথাও বাজি ফাটানই না।

পাড়ার বাসিন্দা, বৃদ্ধ দম্পতি দিলীপ ও নমিতা ভট্টাচার্য জানালেন, বাজির শব্দে মাটি কেঁপে উঠছিল। কিন্তু কে বা কারা সে বাজি ফাটিয়েছেন, তা তাঁরা জানেন না। একই কথা বলছেন পাড়ার অন্য বাসিন্দারা। অনেকেই স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তাঁদের এই পাড়াতেই থাকতে হবে। ফলে এ বিষয়ে কিছু বলতে চান না। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (‌জ়োন ১) অজয় ঠাকুর জানান, নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement