অভিযুক্ত রামকৃষ্ণ মালিক। —নিজস্ব চিত্র।
শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে বাপেরবাড়িতে চলে এসেছিলেন স্ত্রী। তবে স্বামী চেয়েছিলেন স্ত্রীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্ত্রী-র মা-বাবা। সেই রাগে ঘুমন্ত শ্বশুর-শাশুড়িকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল জামাইয়ের বিরুদ্ধে। শনিবার গভীর রাতের এই ঘটনায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মানিকনগরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন সুবল সর্দার (৬২) এবং কাজল সর্দার (৫৫)। ওই দু’জনকে খুনের অভিযোগে শ্রীকৃষ্ণনগরের বাসিন্দা ৪৫ বছরের রামকৃষ্ণ মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায় ৯ বছর আগে রামকৃষ্ণের সঙ্গে জয়নগরের ঢোসা গ্রামপঞ্চায়েতের মানিকনগরের বাসিন্দা কৃষ্ণার বিয়ে হয়েছিল। দম্পতির ৮ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই কৃষ্ণার উপর অত্যাচার চালাতেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সেই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তাঁদের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কৃষ্ণা৷ পরে মেয়েকে নিয়ে মা-বাবার কাছে চলে আসেন তিনি। স্ত্রীকে বাড়ি ফিরিয়েও নিয়ে গিয়েছিল স্বামী। কিন্তু ফের তাঁর উপর অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। আবারও বাপেরবাড়িতে ফিরে আসেন কৃষ্ণা। কিন্তু ফের তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন রামকৃষ্ণ। যদিও তাতে রাজি হননি কৃষ্ণার মা-বাবা। অভিযোগ, সেই রাগের বশেই শনিবার রাত ১টা নাগাদ ঘুমন্ত শ্বশুর-শাশুড়ির ঘরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান রামকৃষ্ণ।
শনিবার গভীর রাতে শ্বশুর-শাশুড়ির চিৎকার শুনে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছুটে আসেন। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিভিয়ে অগ্নিদগ্ধ সুবল এবং কাজলকে উদ্ধার করেন তাঁরা। এর পর বারুইপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে তাঁদের কলকাতায় রেফার করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুবলকে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কাজলকে ভর্তি করানো হয় নীলরতন হাসপাতালে। রবিবার সকালে দু’জনেরই মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় জয়নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃতদের ছেলে ধ্রুবচাঁদ সর্দার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই জামাই রামকৃষ্ণকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় নিজের দোষ কবুল করেছেন অভিযুক্ত। ধৃতের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। সোমবার রামকৃষ্ণকে বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হবে।