বিশ্বজিৎ দাস।
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আপাত স্বাভাবিক ঘটনা হলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঘটনাটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছেন। কারণ, দলত্যাগ করে বিশ্বজিৎ এখন বিজেপি শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। বিজেপিতে নাম লেখানো বিধায়ককে নতুন বছরের শুভেচ্ছাপত্র পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও বার্তা দিতে চাইছেন কিনা, সে প্রশ্নও উঁকি দিতে শুরু করেছে। যদিও বিশ্বজিৎ প্রকাশ্যে তেমন কোনও সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেন। বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড পাঠিয়েছেন। এটা রাজনৈতিক সৌজন্য। রাজনীতিতে এটি থাকা ভাল। রাজনীতির পক্ষে শুভ লক্ষ্মণ।’’
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে বিশ্বজিৎ দলের সঙ্গে ছিলেন। আগে করতেন কংগ্রেস। পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন। ২০১১ সালে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বিধানসভা ভোটে দলীয় টিকিট দেন। বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বিশ্বজিৎ। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে জিতে যান। আগাগোড়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তাঁর।
গত বছর জুন মাসে লোকসভা ভোটের পরে বনগাঁ পুরসভার কয়েক জন তৃণমূল কাউন্সিলর পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। তা নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। এরপরেই বিশ্বজিৎ দিল্লিতে গিয়ে বিজেপির কার্যালয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। বিশ্বজিতের দলত্যাগ করাটা ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। দলত্যাগ করার পরে তাঁর পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ি থেকে গাড়ি থেকে কলকাতায় যাওয়ার পথে তাঁর গাড়ির উপরে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে পুরনো দলের সঙ্গে তাঁর এখন দূরত্ব বেড়েছে অনেকটাই। এখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা পেয়েছেন বিশ্বজিৎ।
এত কিছুর পরেও দলত্যাগী বিধায়ককে নতুন বছরের শুভেচ্ছাপত্র পাঠাতে ভুললেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশের কাছ থেকে ফোনে শুভেচ্ছাপত্রের বিষয়টি জানতে পারেন বিশ্বজিৎ। মঙ্গলবার পুলিশ এসে কার্ড তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে অবাক যে হয়েছিলেন, সে কথা জানা যাচ্ছে বিশ্বজিতের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন শুভেচ্ছাপত্র পাওয়া প্রথম নয়। আমার জন্মদিনেও শুভেচ্ছাপত্র পাঠান। বাবা মারা যাওয়ার পরে মায়ের কাছেও মুখ্যমন্ত্রী শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন। নতুন বছরের শুভেচ্ছাপত্র তিনি পাঠাতেন, তবে দলীয় কার্যালয়ে। এ বারই প্রথম বাড়িতে পাঠালেন।’’
কার্ডের উপরে সমুদ্রের মধ্যে সূর্য ওঠার ছবি আছে। ভিতরে ইংরেজিতে লেখা বার্তা, ‘নতুন বছর তোমার জীবনে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি-সুস্বাস্থ্য বয়ে আনুক।’’ নীচে লেখা, ‘মমতা।’ বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টিকে স্বাভাবিক ঘটনা বলেই মনে করছেন।
তবে বিশ্বজিতের রাজনীতির গতিপথ নিকট ভবিষ্যতে কোনও দিকে বাঁক নেয় কিনা, তা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে জল্পনাও চলছে।