—প্রতীকী চিত্র।
বনগাঁ লোকসভা আসনে এ বার ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর ৭৩ হাজার ৬৯৩ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভার মধ্যে শান্তনু ৬টিতেই এগিয়ে। বিজয়রথ একমাত্র হোঁচট খেয়েছে স্বরূপনগর বিধানসভা কেন্দ্রে। এই কেন্দ্র থেকে ৩৯ হাজার ২১৮ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস।
ভোটের ফল প্রকাশের পরে তৃণমূল কর্মীরাই বলছেন, এক মাত্র স্বরূপনগরই দলের সম্মান রক্ষা করল।
তবে এ বারই প্রথম নয়। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও একমাত্র স্বরূপনগর কেন্দ্র থেকে এগিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর। তিনি এগিয়েছিলেন ২৩ হাজার ৯৭১ ভোটের ব্যবধানে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও বনগাঁ লোকসভার ৭টি বিধানসভার মধ্যে এক মাত্র স্বরূপনগর থেকে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। তৃণমূল প্রার্থী বীণা মণ্ডল ৩৪ হাজার ৮০০ ভোটে জয়ী হয়ে তৃতীয় বারের জন্য স্বরূপনগরের বিধায়ক হন।
এ বার বনগাঁ লোকসভা আসনে জয়ী হতে স্বরূপনগর বিধানসভাকেই পাখির চোখ করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের অনেকেই মনে করেছিলেন, স্বরূপনগর থেকে যত বেশি ভোটের লিড মিলবে, ততই তৃণমূল প্রার্থী সুবিধাজনক জায়গায় থাকবেন। উল্টো দিকে, বিজেপি নেতৃত্বও চাইছিলেন, স্বরূপনগর থেকে তৃণমূলের লিড যাতে যতটা সম্ভব কমানো যায়।
এ বার তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ স্বরূপনগর থেকে ৩৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও তৃণমূল নেতৃত্বের আশা ছিল, আরও বেশি লিড পাওয়া যাবে। তেমন হল না কেন? নেতারা অনেকে মনে করছেন, বাম-কংগ্রেসের ভোট কিছু বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে। এ বার বনগাঁ কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হয়েছিল। প্রার্থী হয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রদীপ বিশ্বাস। তিনি এ বার স্বরূপনগর থেকে পেয়েছেন ২১ হাজার ৩৬২ ভোট। ২০১৯ সালে বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীর মোট ভোট ছিল ৩১ হাজার ৫৫১ ভোট। পাশাপাশি, আইএসএফ প্রার্থী দীপক মজুমদার ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ২৭৯ ভোট। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, গত বার আইএসএফের প্রার্থী ছিল না। এ বার সংখ্যালঘু ভোটও কিছু আইএসএফ কেটেছে। এ সবের ফলে এগিয়ে থাকার ব্যবধান আর বাড়েনি।
এ বার লোকসভা ভোটে তৃণমূল নেতৃত্ব স্বরূপনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে গত বিধানসভা ভোটের থেকেও বেশি ভোটে এগিয়ে থাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করেছিলেন। দলের প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস জানিয়েছিলেন, স্বরূপনগর থেকে অন্তত ৬০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা। তৃণমূল নেতৃত্বের এই দাবির পিছনে ছিল গত পঞ্চায়েত ভোটের সাফল্য। পঞ্চায়েত ভোটে স্বরূপনগর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টিতে তৃণমূল জয়লাভ করেছিল। জেলা পরিষদের তিনটি আসনের সব ক’টিতে তৃণমূল জয়ী হয়। স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের সব ক’টি পায় তৃণমূল।
অতীতে বাম তথা সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল স্বরূপনগর। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল এখানে বাম শিবিরে ভাঙন ধরায়। সে বার স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে ঘাসফুল শিবির। তখন থেকেই এখানে তৃণমূলের জয়যাত্রা শুরু। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বরূপনগর ব্লকে সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় ৪৯ শতাংশ। এটাই এখানে তৃণমূলের বার বার সাফল্যের চাবিকাঠি। এ ছাড়া, মতুয়া, উদ্বাস্তু, তফসিলি ভোটারও রয়েছেন।