অসচেতন: চলছে শরীরচর্চা
গোলাপ ফুল-মিস্টির প্যাকেটের গাঁধীগিরিতে যে কাজ হয়নি, ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে তার প্রমাণ মিলল ক্যানিং বাজারে। বাজারে ভিড় তো নিত্যদিনের চেনা ছবি। তবে তাঁদের অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। শিকেয় উঠেছিল দূরত্ব বিধি। এই পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ কী হতে পারে, তার আভাস মঙ্গলবার দিয়ে রেখেছিল পুলিশ। ফলে মাস্ক না পড়ে বাজারে এসে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবোস করতে হল অনেককে।
শুধু ক্যানিংয়েই নয়, বসিরহাট ব্যারাকপুরেও দেখা গেল এক ছবি। দ্বিতীয় পর্বের লকডাউন আরও কঠোর হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করার পরের দিনে পার্কের তালা ভেঙে শরীরচর্চা করলেন বনগাঁর এক দল বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, যাঁরা লকডাউন ভাঙবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।
বুধবার অবশ্য ক্যানিং বাজার-সহ আশপাশের বাজার এলাকায় ভিড় কিছুটা কম ছিল। এ দিন রাস্তায় নামা লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন পুলিশ কর্মীরা। যথাযথ কারণ দেখাতে না পারলে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। কয়েকজনকে ধমকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তাতে কিছুটা ফলও মেলে। পুলিশের কড়াকড়ির জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে দেখা যায় ক্রেতাদের। দোকানদারেরাও ক্রেতাদের দূরত্ববিধি মানার জন্য চাপ দেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়, এমন কয়েকটি দোকান খোলার জন্য বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। দিন যত যাচ্ছে, ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে মানুষের ভিড়। অধিকাংশের মুখেই থাকছে না মাস্ক। ভাঙড়, ঘটকপুকুর, পোলেরহাট পাকাপোল, চন্দনেশ্বর-সহ বিভিন্ন বাজারে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে বাজার, সর্বত্রই দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে লাইন দিচ্ছে জনতা। মাস্ক না পারার কারণে ভাঙড় থানার পুলিশ কুড়ি জনকে গ্রেফতার করে। লকডাউন ঘোষণা হতেই তালা পড়েছিল খয়রামারি এলাকায়, বনগাঁ হাইস্কুলের খেলার মাঠে। ওই মাঠে রোজ সকালে শরীরচর্চা করতেন বেশ কিছু মানুষ। বুধবার সকালে জনা দশেক যুবক মাঠের বাইরের রাস্তায় সাইকেল, বাইক রেখে কাঁটাতারের বেড়া টপকে মাঠে ঢুকে পড়ে শরীরচর্চা শুরু করে দেন। ঘণ্টাখানেক ধরে চলে তাঁদের কসরত। স্থানীয় মানুষজন বারণ করলেও কর্ণপাত করেননি কেউ। খবর যায় থানায়। পুলিশ এসে পৌঁছনোর আগেই অবশ্য পালিয়ে যান যুবকেরা।
বনগাঁ শহরে গত কয়েক দিনের মতো বুধবারও ভিড়ের ছবিতে কোনও বদল ঘটেনি। এক টোটো চালক চারজন মহিলাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশ টোটো থামালে মহিলা যাত্রীরা জানান, ডাক্তারখানায় গিয়েছিলেন। যদিও চিকিৎসার কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। পুলিশ চালককে ধমক দিয়ে বাড়ি পাঠায়। মঙ্গলবার হালখাতার পুজোর জন্য বেশ কিছু দোকান খোলা হয়েছিল। দীর্ঘ সময় পরেও দোকান খুলে রাখায় পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করে। হাবড়ায় পুলিশ ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি শুরু করেছে। তবুও রাস্তার ভিড়ে ভাটা পড়েনি। বসিরহাট শহর এবং আশপাশের এলাকাতেও রোজরোজ বাড়ছে ভিড়। পুলিশ জানিয়েছে, গত দু’দিনে মহকুমার বিভিন্ন থানায় এলাকা থেকে শতাধিক নিয়মভঙ্গকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশ কিছু মোটরবাইক চালককে জরিমানাও করা হয়েছে। —ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক