Health and Hygiene

শীত ও দূষণে যত্নে রাখুন নিজেকে

ফুসফুসের অসুখে যাঁরা ভোগেন, শীতকালে তাঁরা সতর্ক থাকবেন কী ভাবে? রইল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

Advertisement

শ্রেয়া ঠাকুর

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:০৩
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শীতের সঙ্গে ফুসফুসের বৈরিতা চিরকালীন। শীতের শুষ্কতা ও দূষণে পাল্লা দিয়ে বাড়ে অ্যাজ়মা, সিওপিডি-র মতো ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ। ফাইব্রোসিস, পালমোনারি হাইপারটেনশন বা অকুপেশনাল লাং ডিজ়িজ় যাঁদের রয়েছে, তাঁদের পক্ষেও এই সময়টা সুখকর নয়।

Advertisement

ফুসফুসের অসুখ বা ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজ়িজ় (সিআরডি) মূলত একটি ‘আমব্রেলা টার্ম’, ফুসফুস, শ্বাসনালি, সাইনাস, ফ্যারিঙ্গস, ট্রাকিয়া, ব্রঙ্কাই ও ব্রঙ্কিয়োলস যে রোগে আক্রান্ত হয়। অন্যতম উপসর্গ হল শ্বাস নিতে অসুবিধে, বুকে চাপ, প্রবল কাশি এবং ‘হুইজ়িং’ অর্থাৎ হাঁপরের মতো শ্বাস নেওয়ার শব্দ। সারা বিশ্বে সিআরডি পরিচিত নাম। সবচেয়ে বেশি যে দু’টি সিআরডি-র কথা শোনা যায়, তা হল ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ় বা সিওপিডি ও অ্যাজ়মা। এ ছাড়া রয়েছে পালমোনারি হাইপারটেনশন, অকুপেশনাল লাং ডিজ়িজ়, পালমোনারি ফাইব্রোসিস ইত্যাদি। লাং ক্যানসার, যক্ষ্মাকেও এর আওতায় ফেলা যেতে পারে।

ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়

Advertisement

এই অসুখে ফুসফুসে বিশুদ্ধ বাতাস তথা অক্সিজেন প্রবেশের পথে প্রবল বাধার সৃষ্টি হয়। শরীরে জমতে থাকে কার্বন ডাই অক্সাইড। ফলে, এই অসুখে আক্রান্তেরা শ্বাসকষ্টে ভোগেন। শীতে সেই শ্বাসকষ্ট বাড়ে। ঠান্ডা, রাস্তাঘাটের ধুলো, কলকারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া, বাতাসে সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটারের পরিমাণ বৃদ্ধি সব কিছুই সিওপিডি রোগীদের পক্ষে সমস্যাদায়ক। ধূমপানের অভ্যেস থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ে।

ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “ধুলো-ধোঁয়ার মধ্যে সিওপিডি রোগীরা টানা থাকলে তাঁদের কষ্ট বাড়ে। বুকে চাপ সৃষ্টি হয়, ফুসফুসে প্রদাহ হয়। সুতরাং সিওপিডি থাকলে মাস্ক পরা ভীষণ জরুরি। এ ছাড়া ইনহেলার সঙ্গে রাখতে হবে।”

অ্যাজ়মা বা হাঁপানি

অ্যাজ়মা একটি পরিচিত অসুখ। রোগের তীব্রতা অনুসারে এটি মৃদু থেকে প্রাণঘাতী পর্যন্ত হতে পারে। ডা. গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “অ্যাজ়মা শীতকালে বাড়ে, তাই এই অসুখ নিয়ন্ত্রণে রোগীর ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে জানতে হবে ঠিক কী কারণে তাঁর সমস্যা বাড়ছে। সঙ্গে রাখতে হবে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনহেলার।”

মূলত শ্বাসনালির প্রদাহের ফলেই সূচনা হয় অ্যাজ়মার। যে কোনও বয়সেই হতে পারে এই অসুখটি। অনেক দিন ধরে প্রদাহের ফলে শ্বাসনালির ব্যাস কমে যায়, বাড়তে থাকে সংবেদনশীলতা। এর ফলে, প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাসে সমস্যা তৈরি হয়। এর সঙ্গে যদি মিউকাস থাকে, তা হলে শ্বাস নিতে আরও সমস্যা হয়। দমবন্ধ হয়ে গিয়ে প্রাণ সংশয়ও দেখা যেতে পারে। এই অসুখটি হলে স্যাঁতসেঁতে বা ধুলো-ঝুল রয়েছে, এমন পরিবেশ ও পরাগরেণু এড়িয়ে চলা উচিত। ধূমপান বন্ধ করাই ভাল। শুধু তা-ই নয়, অ্যালার্জি থাকলে সুগন্ধি পারফিউম স্প্রে করা যাবে না। মাস্ক পরা যেতে পারে, তবে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

ডা. গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, নিয়মিত ওষুধ সেবনে অ্যাজ়মার প্রকোপ অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় তার পরেই, অনেকে অসুখটি আর নেই ভেবে হঠাৎ ওষুধ বন্ধ করে দেন। নিয়মিত চেক-আপেও গড়িমসি করেন। এতে অসুখটি মারাত্মক আকার ধারণ করে।

পালমোনারি হাইপারটেনশন

ডা. গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “পালমোনারি হাইপারটেনশন সিজ়নাল সমস্যা নয়। তবে শীতে এই অসুখে কষ্ট বাড়তে পারে। পালমোনারি আর্টেরিয়াল হাইপারটেনশনে ফুসফুসের রক্তবাহগুলি সরু হয়ে যায়, ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এক সময়ে রক্তপ্রবাহ বন্ধও হয়ে যেতে পারে। ফলে, ফুসফুসের ধমনিতে রক্তচাপ বাড়তে থাকে। হৃদ্‌পিণ্ডকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে ফুসফুসে রক্ত পাঠাতে হয় বলে সেটির পেশিও দুর্বল হয়ে পড়ে।”

এই অসুখটির উপসর্গ শুরু হয় অত্যন্ত ধীর লয়ে। ব্যায়াম বা ভারী কাজ করতে গিয়ে প্রথমে দমের কষ্ট শুরু হবে, তার পর শুয়ে-বসে থাকা অবস্থাতেও তা হতে থাকবে। সেই সঙ্গে বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা, অসম্ভব ক্লান্তি। ত্বকের রং পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে অক্সিজেনের অভাবে। পেট, পা ও গোড়ালিও ফুলতে পারে। ফুসফুসের ধমনিতে ‘ব্লাড ক্লট’ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ডা. গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ঠিক চিকিৎসা না হলে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে এই অসুখ। এটির কোনও নিরাময় নেই, তবে উপশম রয়েছে। রোগীকে নিজের যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।

অকুপেশনাল লাং ডিজ়িজ়েস

এই অসুখগুলির ক্ষেত্রেও শীতে আক্রান্তদের কষ্ট বাড়তে পারে। পেশাগত কারণে ধুলো, ধোঁয়া-সহ একাধিক ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকারক জিনিসের সংস্পর্শে দীর্ঘদিন ধরে ‌এলে এই অসুখ হতে পারে। এতে ফুসফুসে বিভিন্ন ক্ষতিকারক জিনিস জমতে থাকে। কারখানা, খনিতে কাজ, নির্মাণকাজ, দমকল ও কৃষিক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের এই সমস্যা দেখা যায়। ডা. গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, অ্যাসবেস্টোসিস, সিলিকোসিস, ব্রাউন লাং ডিজ়িজ়, পেশাগত অ্যা‌জ়মা এই অসুখগুলির মধ্যে অন্যতম।

পালমোনারি ফাইব্রোসিস

উস্তাদ জ়াকির হুসেন দীর্ঘদিন ইডিয়োপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস অসুখে ভুগেছিলেন। এ ক্ষেত্রে ফুসফুসের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ধীরে ধীরে স্থূল ও শক্ত হয়ে গিয়ে শ্বাসকার্যে বাধার সৃষ্টি করে। তখনই শুরু হয় শ্বাস নেওয়ার সমস্যা। এই রোগের সে ভাবে চিকিৎসা নেই। এটাকে প্রতিরোধ করাও কঠিন। কিছু ওষুধ ব্যবহার করা চলে, তবে সেগুলিও আংশিক কাজ করে। তাই সতর্ক ভাবে চিকিৎসা করতে হবে।

আবহাওয়া বদলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শরীরের সময় লাগে। সেই সঙ্গে রয়েছে দূষণ। তাই যাঁদের সিআরডি রয়েছে, খুব সাবধানে থাকতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement