Panchayat Election 2023

এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার পরিবেশ থাকলেও কাজে লাগছে না

ভোট ঘিরে হিংসার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। নতুন প্রজন্মের ভোট-ভাবনা খোঁজ নিয়ে দেখল আনন্দবাজার। আজ, হাসনাবাদ থানার রামেশ্বরপুর বরুণহাট পঞ্চায়েত। আলোচনার আসর, দিঘিরপাড়ের মাঠ।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ১০:০০
Share:

দিঘিরপাড়ের মাঠে আলোচনায় ব্যস্ত তরুণেরা। নিজস্ব চিত্র

ওঁরা সকলে নতুন প্রজন্মের ভোটার। কেউ কলেজ পড়ুয়া, কেউ পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছেন। পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে বহু আকাঙ্ক্ষা ওঁদের। গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান নিয়েও স্বপ্ন দেখেন। এলাকার নানা সমস্যা নিয়ে চিন্তিত অনেকেই। ভোট ঘিরে হিংসার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। নতুন প্রজন্মের ভোট-ভাবনা খোঁজ নিয়ে দেখল আনন্দবাজার। আজ, হাসনাবাদ থানার রামেশ্বরপুর বরুণহাট পঞ্চায়েত। আলোচনার আসর, দিঘিরপাড়ের মাঠ।

Advertisement

তন্ময় লস্কর: দেখতে দেখতে আরও একটা পঞ্চায়েত ভোট এসে গেল। তবে সব এলাকায় সব বাড়িতে এখনও পানীয় জল এসে পৌঁছল না। আজও জল কিনে খেতে হচ্ছে।

Advertisement

সঙ্গীতা অধিকারী: যে-ই ক্ষমতায় আসুক, দ্রুত পানীয় জল যাতে বাড়ি বাড়ি আসে, তা দেখা দরকার। সেই সঙ্গে গ্রামের রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন। বিশেষ করে, সীমান্ত লাগোয়া কাটাখালি সেতুর উপরে দীর্ঘ দিন ধরে আলো নেই। অনেকে সেতুর উপরে সন্ধ্যা থেকে জটলা করে। মহিলারা ভয়ে ভয়ে যাতায়াত করেন।

কমলেন্দু সরকার: গ্রামের রাস্তায় আলোর সমস্যা সত্যিই বিড়ম্বনায় ফেলে। গ্রামের কিছু জায়গায় আলো লাগানোর কিছু দিনের মধ্যেই খারাপ হয়ে গিয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। পঞ্চায়েতের উচিত এটা নজরদারি করা।

সুমন নাথ: শুধু কি রাস্তা আর আলো, গ্রামের নিকাশিও তো বেশ খারাপ। অনেক জায়গায় পাকা নালা থাকলেও সংস্কার হয় না। বর্ষায় অনেক জায়গায় জল জমে যায়।

বিপ্লব দালাল: গ্রামে বরুণহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে, তবে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আরও উন্নতি দরকার। কেউ অসুস্থ হলে ঠিকঠাক পরিষেবা পাওয়ার আশায় সেই টাকি হাসপাতালেই নিয়ে ছুটতে হয়। রাতে কেউ অসুস্থ হলে তো ভোগান্তির শেষ থাকে না। ৭-৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যেতে হয় টাকি হাসপাতালে।

কমলেন্দু: আমি শুধু ভাবছি গ্রামে কর্মসংস্থান কবে হবে। গ্রামে কাজ না পেয়ে ওড়িশায় শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলাম। আবহাওয়ার সমস্যায় থাকতে না পেরে বাড়ি ফিরে এলাম। এক বছর হয়ে গেল এখনও কোনও কাজের খোঁজ পাচ্ছি না। গ্রামেও কাজ নেই। যাঁরাই পঞ্চায়েত পরিচালনা করুন না কেন, যদি গ্রামে কর্মসংস্থান হয় তা হলে ভাল।

বিপ্লব: আমিও তো এমএ-বিএড করে ২০১৪ সালে টেট পাশ করে বসে আছি। দু’বার ইন্টারভিউ দিয়েছি। এখনও চাকরির দেখা নেই। ফের সামনের মাসে একটা ইন্টারভিউ আছে। জানি না চাকরি কবে হবে। গ্রামে শিক্ষিত বেকারদের জন্য তেমন কোনও কাজ নেই।

তন্ময়: গ্রামে যে কয়েকটি স্কুল আছে, সব আংশিক সময়ের শিক্ষকের উপরে নির্ভরশীল। স্থায়ী শিক্ষকের বহু পদ ফাঁকা। গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা হবে কী করে!

সুমন: গ্রামের আলিগলিতে অনেক রাস্তার সংস্কার দরকার। হাসনাবাদ নেবুখালি রোড অনেক উঁচু করে তৈরি হয়েছে। যে অংশে গলি রাস্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেখানে এত নিচু যে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হয়। দুর্ঘটনাও ঘটে। নেবুখালি-হাসনাবাদ রোডে বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার পাশে ফুটপাত নেই। যে ভাবে গাড়ি চলাচল করে, খুব ভয় করে হেঁটে যাতায়াত করতে। ফুটপাত থাকলে ভাল হত।

বিপ্লব: রাস্তার পাশে অনেক গাছ ছিল। বুলবুল ঝড়ের সময়ে সব পড়ে যায়। এখন ফের রাস্তার পাশে গাছ লাগানো দরকার। আর যে সব গাছের ডালপালা শুকিয়ে বিপজ্জনক ভাবে রাস্তার উপরে ঝুলে আছে, সেগুলি কাটতে হবে। গ্রামের বিভিন্ন বাজার ও মোড়ে যত্রতত্র প্লাস্টিক ও বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়। এগুলি সরানোর জন্য পঞ্চায়েত থেকে কড়া পদক্ষেপ করা দরকার। পাশেই নদী আছে। নদীতেও প্লাস্টিক ও আবর্জনা এসে মেশে। এগুলি নজর দেওয়া দরকার।

সঙ্গীতা: এত ভোট এল-গেল, এখনও গ্রামের শ্মশানঘাটগুলির পরিকাঠামোর উন্নতি হল না। উপরে ছাউনির অভাবে এখনও বৃষ্টি হলে দাহ করা যায় না। দেহ নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়।

কমলেন্দু: গ্রামে বিনোদনের কোনও ব্যবস্থা নেই। সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র হলে ভাল হয়। ছোটখাটো একটি প্রেক্ষাগৃহ হলে খুবই ভাল। গ্রামে পার্ক করার উপযুক্ত জায়গা আছে, সেটা হলেও তো ভাল হয়।

সঙ্গীতা: বরুণহাট এলাকার গর্ব বোটানিক্যাল গার্ডেন। কত দুর্লভ প্রজাতির শতাব্দী প্রাচীন বটগাছ আছে সেখানে। কয়েক বিঘা জমির উপরে বিশাল বট গাছটাও তো রয়েছে। সেটি অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণ দরকার। এটি কিন্তু খুব ভাল পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। বার বার বিষয়টি তোলা হলেও সরকার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

বিপ্লব: এই সব দাবি যেমন একদিকে রয়েছে, এর সঙ্গে গত বার পঞ্চায়েত ভোটে গোলমালের স্মৃতিও কিন্তু মানুষ মনে রেখেছেন।

সঙ্গীতা: সে আর বলতে, গত বার পঞ্চায়েত ভোটে অশান্তির ফলে তো আমরা ভোটই দিতে যেতে পারিনি। এ বার আশা করি, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement