প্রতীকী ছবি।
অশোকনগরে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্পের জন্য যাঁদের জমি নেওয়া হচ্ছে, তাঁদের পুনর্বাসন ও চাকরির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে সোমবার জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই কথায় ভরসা পাচ্ছেন এলাকায় চাষাবাদ করা মানুষজন। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের জন্য অনেক মানুষ জমিহারা হয়েছেন। প্রকল্পের জন্য আরও জমি চেয়ে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ রাজ্যের কাছে আবেদন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন বিনামূল্যে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষকে জমি দেওয়া হবে। ওই সব জমিতে অনেক মানুষ বহু বছর ধরে চাষবাস করছেন। তাঁদের সকলেরই বক্তব্য, দেশের স্বার্থে, এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তাঁদের জমি দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁরা চান, সরকার তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক। চাষিরা ওই দাবি নিয়ে এলাকায় মিছিল, সভা করেছেন। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ চাষিদের সঙ্গে কথাই বলেনি বলে অভিযোগ। যা নিয়ে চাষিরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এমনকী, তেলমন্ত্রী প্রকল্প এলাকায় এলেও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি চাষিরা। তেল প্রকল্পে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকারের কথা বললেও ক্ষতিপূরণ নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি। ফলে সংশয় ছিল অনেকেরই। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে আশ্বস্ত হয়েছেন তাঁরা।
প্রকল্প এলাকায় জমি ছিল নারায়ণচন্দ্র দাসের। পরবর্তী সময়ে আরও জমি চলে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার কথা শুনেছেন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর পুনর্বাসন ও চাকরির আশ্বাসে আমরা আশ্বস্ত ও খুশি। কেউ তো এই প্রথম আমাদের হয়ে বললেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর কথা কার্যকর করতে হবে। ওখানে আমাদের তিন ফসলি জমি আছে।’’ জীবনপ্রসাদ সিকদারের পারিবারিক জমি আছে। জমি চলে গেলেও এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ভরসা পাচ্ছি। তবে আমরা আমাদের ক্ষতিপূরণের দাবি থেকে সরছি না।’’
বিপুল মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘প্রকল্প এলাকায় আমার ২ বিঘে ৫ কাঠা জমি আছে। আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি আমাদের আছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ভরসা পাচ্ছি নতুন করে। তবে ঘোষণার কথা কার্যকর করতে হবে।’’
কিন্তু জমি তো খাস। বিপুল বলেন, ‘‘সরকারি জমি হলেও তা উদ্বাস্তুদের চাষ করার জন্য দেওয়া হয়েছিল। তারপরে কয়েকবার হাতবদল হয়েছে। সে সব নথিপত্র আমাদের আছে।’’
বর্তমানে প্রকল্প এলাকা ছাড়াও ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ হিজলিয়া মৌজা এবং শ্রমলক্ষ্মী কলোনি এলাকায় জমি মাপজোক করেছেন। শ্রমলক্ষ্মী কলোনি এলাকার কয়েক বাসিন্দা জানালেন, দেশের স্বার্থে ঘরবাড়ি ছাড়তে তাঁরা রাজি। তবে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।
চাষিরা যাতে আন্দোলনমুখী না হন, সে জন্য সিপিএমের পক্ষ থেকে জমিহারাদের বোঝানো হচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরেই। অশোকনগরকে ‘দ্বিতীয় সিঙ্গুর’ হতে দেওয়া যাবে না পথে নেমেছে বামেরা। তবে চাষাবাদ করা মানুষদের ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের দাবিও তোলা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘পুনর্বাসন বলতে উনি (মুখ্যমন্ত্রী) ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। জমির বদলে জমি দেওয়া হবে, নাকি টাকা দেওয়া হবে, তো বোঝা যাচ্ছে না।’’ প্রকল্পে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও খোলসা করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিপিএমের দাবি, বুধবার চাষিদের নিয়ে জেলাশাসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। জেলাশাসক আলোচনা বাতিল করেছেন। জেলা প্রশাসন এ নিয়ে মন্তব্য করেনি।