বিপজ্জনক: তলিয়ে যাচ্ছে জমিজমা। ঘোড়ামারায়। ফাইল চিত্র
নদীর চরে বেআইনি নির্মাণ চলছে প্রায় সর্বত্র। সেই সঙ্গে চলছে ম্যানগ্রোভ নিধন। এ সবের জেরে সুন্দরবন এলাকায় উপকূলের ক্ষতি হচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে বাদাবন। অভিযোগ, উপকূল রক্ষায় প্রশাসনের তেমন নজর নেই। সুন্দরবনে ‘কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট’-এর নিয়মকানুনও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
গঙ্গাসাগর, ঘোড়ামারা, মৌসুনি, নামখানা, জি প্লটের মতো জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ এলাকা রয়েছে সুন্দরবনে। এ ছাড়া, ধনচি, ডালহৌসি, বুলচেরি, বঙ্গদুনি, জম্বুদ্বীপের মতো জঙ্গলে ঢাকা দ্বীপ এলাকা রয়েছে। উপগ্রহ চিত্র পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, গত পাঁচ দশকে (১৯৭০-২০২০) এই দ্বীপগুলি প্রায় ১২৯ বর্গ কিলোমিটার ক্ষয়ে গিয়েছে। জঙ্গলে ঢাকা দ্বীপ এলাকাগুলি এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৮০ বর্গ কিলোমিটার ছোট হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। বসতি দ্বীপগুলির ক্ষয় হয়েছে প্রায় ৪৯ বর্গ কিলোমিটার।
ক্ষয়ে যাওয়া পলি জোয়ারের টানে ভেসে এসে নদীর খাতে জমে প্রায় ৯০ বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমিও জেগে উঠছে। আবার সাগরদ্বীপ সংলগ্ন লোহাচরা, বেডফোর্ড ও ল্যাসদ্বীপ তলিয়ে গিয়েছে। ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে ঘোড়ামারা দ্বীপ। ঘোড়ামারার কাছেই আবার হলদি নদীর মোহনায় জেগে উঠেছে নয়াচর নামে এক নতুন দ্বীপ।
গত কয়েক বছর উপকূল এলাকায় ভূমিক্ষয় রক্ষা করার জন্য মাটি, ইট, সিমেন্ট ও জাল দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু চেষ্টা সফল হয়নি। আইআইটি চেন্নাইয়ের বিশেষজ্ঞেরা সাগরদ্বীপকে রক্ষা করার জন্য জোয়ারের নিম্নসীমা থেকে ২০০ মিটার দক্ষিণে একটি প্রাচীর নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র সরকারের সহযোগিতা না মেলায় সেই কাজ আটকে আছে বলে অভিযোগ জেলা প্রশাসনের এক কর্তার।
গত বছর শেষের দিকে গঙ্গাসাগরের কপিলমুনি মন্দিরের সোজা দু’নম্বর রাস্তা বরাবর সেচ দফতরের পক্ষ থেকে বিশেষ বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল মন্দিরের সামনে ভূমিক্ষয় রোধ করার জন্য। কিন্তু সেই বাঁধের কাজ এখনও শুরু হয়নি। সাগর, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা এলাকায় একাধিক বেহাল নদীবাঁধ কংক্রিটের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই কাজও শেষ হয়নি। কোথাও আবার শুরুই হয়নি। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “উপকূল এলাকায় কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ম মানা হচ্ছে না। কলকাতা হাই কোর্ট এবং ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ রাজ্য সরকার পালন করছে না। দিঘা, সুন্দরবন লুন্ঠন হছে। এখানকার জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। ভূমিক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না। পরিবেশ দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং বায়ো ডাইভার্সিটি বোর্ডের কোনও হেলদোল নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের মুনাফা লাভ হচ্ছে।”