প্রতীকী ছবি
ভিড় বাড়ছে ট্রেনে। ফাঁকা হচ্ছে বাস।
বুধবারের পরে বৃহস্পতিবারও বহু জায়গাতেই ট্রেনের কামরার সেই পরিচিত হুড়োহুড়ির ছবি চোখে পড়েছে। তবে সরকারি-বেসরকারি বাসে গত কয়েক মাসের চেনা ভিড় আর নেই। যাত্রী নেই শহরতলি থেকে কলকাতায় আসা ছোট ভাড়ার গাড়িগুলিতেও।
ট্রেন বন্ধ থাকায় দুই জেলার গ্রামীণ এলাকা, শহরতলি থেকে কলকাতা বা অন্যত্র যাওয়ার জন্য প্রধান ভরসা ছিল বাস। এতে একদিকে যেমন সময় বেশি লাগছিল, তেমনই খরচও হচ্ছিল অনেক বেশি। ট্রেন চালু হওয়ায় গ্রাম, শহরতলির বহু মানুষই বাস ছেড়ে ফের রেলপথ ধরেছেন। ফলে বাসস্ট্যান্ডের ভিড় উধাও। বাসগুলিও আগের থেকে অনেক কম যাত্রী নিয়ে চলেছে বৃহস্পতিবার। কলকাতার একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা গোপাল মিস্ত্রি। এত দিন বাসে করেই কলকাতা যাতায়াত করেছেন। ওই যুবকের কথায়, “ট্রেন না চলায় খুবই সমস্যায় পরেছিলাম। বাসে একদিকে যেমন সময় লাগত বেশি, তেমনই অনেক টাকা খরচ হত। ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।” ডায়মন্ড হারবার-ধর্মতলা রুটের একটি বেসরকারি বাসের কর্মী মোজাফ্ফর মোল্লা জানান, ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায়, বাসের যাত্রী কিছুটা কমেছে। তবে বাসের কিছু নির্দিষ্ট যাত্রী আছেন। একই ছবি বনগাঁ, বসিরহাটে। ট্রেন চালু হওয়ায় বাসে যাত্রী সংখ্যা কমেছে। যে ঠাসাঠাসি ভিড় হচ্ছিল, সেটা কমায় বাসযাত্রীরা অবশ্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় ছোট ভাড়ার গাড়ির চাহিদা বেড়েছিল। অনেকেই ছোট গাড়িতে কলকাতা-সহ অন্যত্র যাচ্ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে যাত্রী কমেছে ওই গাড়ির।
বসিরহাটের বাসিন্দা কলকাতায় একটি সরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী মহীতোষ বিশ্বাস বলেন, “আমরা কয়েকজন মিলে অনেক টাকা খরচ করে একটা গাড়ি ভাড়া করে অফিসে যেতাম। ট্রেন চলায় এক দিক থেকে যেমন চলাচলে সুবিধা হবে, তেমন টাকাটাও বাঁচবে।” বনগাঁর এক ছোট গাড়ির চালকের কথায়, “মাসে ২০-২৫ দিন ভাড়া নিয়ে কলকাতা, বারাসত যেতে হচ্ছিল। ট্রেন চলায় যাত্রী কমতে শুরু করেছে।”
ট্রেন না চলায় স্টেশন সংলগ্ন রুটের অটো-টোটো-রিকশা চালকদের যাত্রী একেবারে কমে গিয়েছিল। এ বার হাসি ফুটেছে তাঁদের মুখে। বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রীরা ভ্যান, টোটো, অটো করে বনগাঁ স্টেশনে যাতায়াত করতেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় এই সব চালকদের রুজি-রোজগার কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ট্রেন চালু হওয়ায় একটু একটু করে ফের রোজগার বাড়ছে তাঁদের। বনগাঁ স্টেশন থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত অটো রুটে ৯১টি অটো যাতায়াত করে। অটো চালক রবি অধিকারী বলেন, “এত দিন রোজ ২০টির মতো অটো চলত। কিন্তু গ্যাসের খরচ উঠত না। বুধবার থেকে ট্রেন চালু হওয়ায় আশা করছি আয় বাড়বে।”
স্টেশন থেকে যাত্রীদের নিয়ে ভ্যান চালকেরা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেন। এত দিন যাত্রীর অভাবে তাঁরা কার্যত রোজগারহীন ছিলেন। চালকেরা জানালেন, স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৩০০ টাকা আয় হলে সেটা গত কয়েক মাসে ৮০-১০০ টাকায় নেমে এসেছিল। পরিবার নিয়ে অনটনে দিন কাটাতে হচ্ছিল। একই পরিস্থিতি ছিল টোটো চালকদেরও। ট্রেন চলায় রোজগার বাড়তে শুরু করেছে স্টেশন-সংলগ্ন রুটের চালকদের।