খড়দহে বিপুল ব্যবধানে জয় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের। —নিজস্ব চিত্র।
খড়দহের রিং-এ প্রতিপক্ষকে নকআউট করে দিয়েছেন সপাটে। জীবনের সর্বাধিক ব্যবধানে এই জয়ের কথা তিনি লিখবেন আত্মজীবনীতে। জয়ের পর সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানালেন খড়দহের তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি খড়দহের উন্নয়নের জন্য নিজের পরিকল্পনার কথাও শুনিয়েছেন তিনি।
১৯তম রাউন্ডের অনেকটা আগেই স্পষ্ট হয়ে যায় শোভনদেবের জয়। কিন্তু বিজেপি প্রার্থী জয় সাহাকে তিনি কত ব্যবধানে পিছনে ফেলেন সেটাই হয়ে উঠেছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় ৯৩ হাজার ৮৩২ ভোটে জিতেছেন শোভনদেব। খড়দহে সমর্থনের জল যে জোয়ারের ঢেউ হয়ে উঠবে তা আগে থাকতে আঁচ করতে পারেননি তিনি, সাংবাদিক বৈঠকে তা স্বীকারও করেছেন শোভনদেব। বলেছেন, ‘‘আমি নিজেও ভাবিনি এত ভোটে জিতব। আমার যা মূল্যায়ন ছিল তার থেকে অনেক বেশি ভোটে জিতেছি। খড়দহবাসীকে অভিনন্দন। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’’ এই সূত্রেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘আত্মজীবনী লিখছি। সেখানে খড়দহের কথা লিখব। এটা আমার জীবনে বড় প্রাপ্তি। এর আগে রাসবিহারীতে সবচেয়ে বেশি ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলাম।’’
ন’বারের বিধায়ক শোভনদেব। মঙ্গলবার ইভিএম খুলতেই খড়দহে জনসমর্থনের জোয়ার আবেগমথিত করে তুলেছে তৃণমূলের অন্যতম সেই ‘স্থিতপ্রাজ্ঞ’কেও। খড়দহবাসী এবং দলকে এই জয় উৎসর্গ করেছেন তিনি। পাশাপাশি ওই কেন্দ্রের প্রাক্তন জয়ী তৃণমূল প্রার্থী প্রয়াত কাজল সিংহের পরিবারের প্রতি জানিয়েছেন সমবেদনা। কাজল-জায়া নন্দিতাকে বলেছেন, ‘‘আমি তোমার দাদার মতো।’’ আবার খড়দহবাসীকেও বার্তা দিয়েছেন, ‘‘এর পর এখানকার চেয়ারম্যান, সাংসদ, জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসব। সমস্যা খুঁজে বার করে সমাধান করব। এখানে জল জমে থাকার সমস্যা আছে। তার সমাধান করার চেষ্টা করব। খড়দহের ওভারব্রিজ নিয়েও কথা বলেছি।’’
জয়ের পর উচ্ছ্বাস প্রদর্শনে দলীয় কর্মীদের সংযমের বার্তা দিয়ে শোভনদেব বলেছেন, ‘‘জোর করে আবির খেলা নয়।’’ সতর্ক করে দিয়েছেন ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও। স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন দলীয় নির্দেশের কথা। আবার খড়্গহস্ত হয়েছেন বিজেপি-র প্রতিও। সহনশীলতার বার্তা দিয়ে শোভনদেব বলে দিয়েছেন, ‘‘আমি পুরোহিত। ঘণ্টা বাজিয়ে পুজো করি। কিন্তু হিন্দু হওয়া মানে অন্য ধর্মকে অস্বীকার করা বা ঘৃণা করা নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘খড়দহের জনগণ বার্তা দিয়ে দিয়েছেন আমি বহিরাগত নই। আমি আর কী বলব?’’
মঙ্গলবার ভোটগণনায় বরাবরই প্রথম স্থানে ছিল তৃণমূল। তবে চমকপ্রদ ভাবে এক সময় বেশ কিছুটা আশা জাগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বামেরা। সেই প্রসঙ্গ টেনে শোভনদেব বলেন, ‘‘বামেরা একটা সত্যিকারের রাজনৈতিক দল। কিন্তু মুশকিল হয়েছে, ওরা রাজনৈতিক ভাবে দ্বিধাগ্রস্ত। এ জন্যই ওরা মাটি হারিয়ে ফেলল। ওরা জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের দিকে এগোবে না গণতান্ত্রিক সমাজবাদের দিকে এগোবে তা নিয়েই দিশেহারা। সত্যিকারের নীতি-আদর্শ সম্পর্কে যত ক্ষণ না স্পষ্ট ধারণা হবে তত ক্ষণ ওঁরা ভুল পথেই হাঁটবেন। যেমন কংগ্রেস এখন নেতৃত্বহীন বলে ওরা ভুল পথে হাঁটছে।’’
ভবানীপুর ফেরার পথে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে দেখা করার কথা জানিয়েছেন শোভনদেব। তাঁর মতে, ‘‘দেশের মাটিতে এক জন মুখ্যমন্ত্রীই প্রমাণ করতে পেরেছেন তিনি যা প্রতিশ্রুতি দেন তাই করেন।’’ আবার অকপটে বলেছেন, ‘‘খড়দহ ইতিমধ্যেই আমার দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে গিয়েছে। তবে এখানে প্রতি দিন থাকব না। মিথ্যা কথা আমি বলব না। কারণ আমারও ঘরবাড়ি আছে। তবে নিয়মিত যাতায়াত করব। মানুষ আমার থেকে পরিষেবা পাবেন।’’