প্রতীকী ছবি।
বৃদ্ধা মাকে তালা দিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ উঠল ছেলের বিরুদ্ধে। আর এই কাজে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার দলবল সেই ছেলেকে সহযোগিতা করেছে বলেও দাবি করলেন ওই বৃদ্ধা। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে খড়দহে।
এই ঘটনায় শাশুড়ির সঙ্গেই ঘরে আটকে পড়েছিলেন বড় বৌমা। যিনি আবার ওই এলাকারই প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই ছেলেকে ডেকে তালা খুলিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই প্রকাশ্যে এসেছে বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের। কারণ, ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তৃণমূলের খড়দহ টাউনের সভাপতি।
খড়দহের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের নারায়ণ দাস কলোনির বাসিন্দা অণিমা দাস জানান, তাঁর মেজ ছেলে বিশ্বজিৎ বছরখানেক ধরে অন্যত্র থাকেন। বৃদ্ধা থাকেন বড় ছেলের কাছে। তবে সপ্তাহখানেক ধরে মেজ ছেলে ফের ওই বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করেছিলেন। এ দিন সকালেও আসেন তিনি। অণিমাদেবী বলেন, ‘‘বাড়িতে পুরুষ কেউ ছিল না। তাই আমি মূল গেটে তালা দিয়ে রেখেছিলাম। আচমকা পাঁচ-ছয় জনকে সঙ্গে নিয়ে এসে বিশ্বজিৎ আমাকে তালা খোলার জন্য চাপ দেয়।’’ বৃদ্ধার অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার জন্য তাঁর উপরে মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন ওই ছেলে। কিন্তু তাতে রাজি হননি অণিমাদেবী।
এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ও আগেও আমাকে মারধর করেছিল। তা নিয়ে থানায় অভিযোগও করেছিলাম। এ বার দরজা না খোলায় ছেলে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দিল। পুলিশকে জানাব বলতেই আমাকে হুমকি দিল।’’ সেই সময়ে বাড়ির ভিতরেই ছিলেন বৃদ্ধার বড় বৌমা তথা ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর দোলা দাস। তিনি জানান, মেজ দেওর চলে যাওয়ার পরে তাঁরা খড়দহ থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে ওই যুবককে ডেকে পাঠিয়ে তালা খোলায়। দোলার দাবি, তাঁর দেওর তৃণমূলকর্মী। খড়দহের পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান কাজল সিংহের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসেই তিনি ওই হামলা চালিয়েছেন।
প্রাক্তন কাউন্সিলর ও বর্তমানের ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের বাড়িতেই এমন ঘটনার পরে খড়দহ টাউনের সভাপতি সুকন্ঠ বণিক বলেন, ‘‘এক জন বৃদ্ধাকে তালা দিয়ে আটকে রাখা ঠিক হয়নি। যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এমন চলতে থাকলে তিন-চার মাসে খড়দহ থেকে তৃণমূল দল উঠে যাবে।’’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাজল সিংহ বলেন, ‘‘এটা পারিবারিক ঘটনা। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। দোলা পুরসভার কোঅর্ডিনেটর, তার সঙ্গে বিবাদ কেন থাকবে? আর দলের ভাল-মন্দের বিষয়টা দেখার দায়িত্ব সভাপতির।’’
বৃদ্ধার অভিযুক্ত মেজ ছেলে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘আমি তালা দিইনি। ওই বাড়িতে আমার একটি অফিস রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন যাই। আজও গিয়েছিলাম। কিন্তু মা ঢুকতে দিতে রাজি হননি। পরিবারের অত্যাচারেই আমি বাড়ি ছেড়েছি।’’ তিনি আরও দাবি করেন, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। কাজলবাবু বা তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউই এই ঘটনায় যুক্ত নন।