—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এমনিতেই ছাত্রসংখ্যার অনুপাতে শিক্ষক নেই। তারপরে হাই কোর্টের রায়ে বহু শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশের পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার অনেক স্কুলে পড়াশোনাই সঙ্কটের মুখে। অনেক স্কুলে একাদশ-দ্বাদশে পড়া বন্ধও করে দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা। ক্ষুব্ধ প্রধান শিক্ষকদের অনেকে চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের আইনি লড়াইয়ে পাশে থাকার কথা জানাচ্ছেন।
জীবনতলার হাওড়ামারি হাই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩৭০০। শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন মাত্র ৪৩ জন। এর মধ্যে সাত জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল হয়েছে আদালতের নির্দেশে। স্কুলে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য বিভাগ রয়েছে। সাত জন শিক্ষকের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক চলে যাওয়ায় স্কুলের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পঠন-পাঠন বন্ধ হওয়ার মুখে। এক জন অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। ফলে স্কুলের কাজকর্মও বন্ধ হওয়ার মুখে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক দেবপালেন্দু মণ্ডল।
একই পরিস্থিতি ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট হাই স্কুলেও। সেখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। শিক্ষক মাত্র ৩৯ জন। আদালতের নির্দেশে ৬ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল হওয়ায় সেই স্কুলেও সমস্যা তৈরি হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সরকার।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড় ১ ও ১ ব্লকের সমস্ত স্কুল মিলিয়ে প্রায় ৫০-৭০ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল হয়েছে বলে। ভাঙড় ২ ব্লকের কারবালা হাইস্কুলে তিন জন শিক্ষক ও এক অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। কী ভাবে স্কুল চালানো যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু তোহা মণ্ডল। ভাঙড় হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৫০০ জন। এর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন মাত্র ৩৬ জন। পাঁচ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। স্কুলে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ক্লাস কী ভাবে চলবে তা নিয়ে চিন্তিত স্কুল কর্তৃপক্ষ।
চাকরি বাতিলের জের পড়ছে সরকারি প্রকল্প কন্যাশ্রীতেও। ভাঙড় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ২৬৬৬ জন। স্কুলের ৩০ জন শিক্ষিকার মধ্যে আদালতের নির্দেশে ৬ জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। ২ জন অশিক্ষক কর্মীকেও চলে যেতে হচ্ছে। ফলে স্কুলের কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ কী ভাবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে চিন্তিত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নূপুর সিকদার। এ ছাড়াও, ভাঙড়ের কচুয়া হাই স্কুলে তিন জন শিক্ষক, কাঁঠালিয়া হাইস্কুলে এক জন শিক্ষক ও এক জন অশিক্ষক কর্মী, চন্দনেশ্বর হাইস্কুলে ছ’জন শিক্ষক, বোদরা হাইস্কুলে পাঁচ জন শিক্ষক, হাটগাছা হরিদাস বিদ্যাপীঠে তিন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
একেবারেই প্রত্যন্ত এলাকার রায়দিঘির গুণসিন্ধু বালিকা বিদ্যালয়ে আট শিক্ষিকা ও এক জন শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ায় সঙ্কটে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাত্র পাঁচ জন শিক্ষিকা নিয়ে স্কুল চালানো অসম্ভব বলে জানিয়েছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা সেনাপতি। তিনি জানান, যোগ্যদের দাবির পাশে থাকবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর মধ্যে দক্ষ যিনি, তাঁরই চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। কম্পিউটারের কাজে দক্ষ ওই কর্মী একাই সমস্ত কাজ সামলে নিতেন। আমি ওঁদের আন্দোলনে শামিল হতে চাই, পাশে থাকতে চাই।’’
রায়দিঘির খাঁড়াপাড়া হাই স্কুলে তিন জনের, রায়দিঘি শ্রীফলতলা হাইস্কুলে তিন জনের ও করালিরচক চক হাইস্কুলে তিন শিক্ষকের চাকরি যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়াশোনা। বহু স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।