TMC

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দল অশোকনগরে, ভাঙচুর, বোমাবাজি গ্রামে

সোমবার রাতে ইমরান মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মীকে রাস্তায় ফেলে দলেরই কিছু লোক মারধর করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার জেরে তৃণমূলের দু’পক্ষের মারপিট বাধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

অশোকনগর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:২৬
Share:

চিহ্ন: পড়ে আছে ভাঙাচোরা বাইক, চেয়ার। ছবি: সুজিত দুয়ারি

এলাকার দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মারপিট, বোমাবাজির ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল অশোকনগরের শ্রীকৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের গিলাপোল এলাকা। জখম হয়েছেন দু’পক্ষের ৬ জন। সোমবার রাতে এই ঘটনায় দু’টি ট্র্যাক্টর ও একটি বাইক ভাঙচুর করা হয়। বাড়িঘর লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে ইট-পাটকেল। মহিলাদের গালিগালাজ করা হয়। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসেছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’

Advertisement

সোমবার রাতে ইমরান মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মীকে রাস্তায় ফেলে দলেরই কিছু লোক মারধর করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার জেরে তৃণমূলের দু’পক্ষের মারপিট বাধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধানের অনুগামীদের মধ্যে প্রায়শই ঝামেলা বাধে। বেআইনি ভাবে গাছ কাটা, বেআইনি মাটির কারবার, তোলা আদায়-সহ নানা বিষয় নিয়ে তৃণমূলের এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে রেষারেষি লেগেই থাকে বলে জানালেন স্থানীয় অনেকে। জানুয়ারি মাসেও এলাকায় বোমাবাজি করে একদল দুষ্কৃতী।

গোষ্ঠীকোন্দলের কথা প্রধানের স্বামী এবং উপপ্রধান দু’জনেই অস্বীকার করেছেন। উপপ্রধান রফিকুল হাসান বলেন, ‘‘এখানে আলাদা গোষ্ঠী বলে কিছু নেই। আমরা সকলে একটাই দল করি। তবে এটা ঠিক, মহিলা প্রধান বাড়িতে থাকেন। তাঁর স্বামী পঞ্চায়েতে বসেন। এ নিয়ে মানুষের ক্ষোভ আছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গিলাপোল এলাকায় কিছু তৃণমূল সমর্থক অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গিয়েছে। যাঁরা পুরনো তৃণমূল কর্মী, তাঁরা এ সব মানতে পারছেন না। তা নিয়েই সোমবার রাতে মারপিট হয়েছে। দলীয় ভাবে আমরা বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করছি।"

Advertisement

প্রধান সুরাইয়া বিবির স্বামী মোশারেফ মণ্ডলও দাবি করেছেন, সোমবারের ঘটনার পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নেই। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি কুড়ি বছর ধরে রাজনীতি করছি।হাটে ব্যবসা করি। প্রধানের কাজআমি কী ভাবে সামলাবো? সব অভিযোগ মিথ্যে।’’

অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী আবার দায় চাপিয়েছেন বিজেপির উপরে। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের এক নেতা আছেন। তিনি মাটি মাফিয়া। গ্রামবাসীরা তাঁকে এলাকায় ঢুকতে দেন না। সোমবার তিনি এলাকায় আসায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি বুঝে তিনি চলেও যান। পরে মাটি মাফিয়ারা এলাকায় বোমাবাজি, ভাঙচুর করেছে।’’

অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, ‘‘গিলাপোলের ঘটনাটি তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের ফল। বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী এবং প্রাক্তন বিধায়ক ধীমান রায়ের গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে।’’ ধীমানের আবার দাবি, ‘‘এক সময়ে যারা বিজেপি করত, শুনেছি তাদের অনেকে কারও কারও হাত ধরে তৃণমূলে ঢুকেছে। তারাইপুরনো কর্মীদের মারধর করছে। মাটি পাচার করছে।’’

সোমবার রাতে সাহারানা বিবি নামে এক মহিলার বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। তিনি জানিয়েছেন, আগে বিজেপি করতেন। পরে তৃণমূলে আসেন। সেলিম তরফদার নামে এক তৃণমূল কর্মীকে এ জন্য ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, সেলিম ও তাঁর দলবলই হামলা চালিয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে সেলিমের বক্তব্য, ‘‘আমরা দোকানে বসেছিলাম। সে সময়ে হামলা করা হয়। কোপানো হয়। আমাদের ৪ জন জখম হয়েছেন।’’ টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘টাকা নিয়েছি, তার কোনও ভিডিয়ো আছে? মুখে যে কেউ অভিযোগ করতেই পারেন। প্রমাণ দিতে হবে।’’

তৃণমূলের হাবড়া ২ ব্লক সভাপতি বৃন্দাবন ঘোষ জানিয়েছেন, তৃণমূলে ঢোকানোর নাম করে কেউ কারও থেকে টাকা নিয়ে থাকলে দল কড়া পদক্ষেপ করবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement