প্রতীকী ছবি।
অনলাইনে সুবিধা করতে পারছে না বহু পড়ুয়া। আর্থিক সমস্যার ফলে পড়া ছেড়েও দিচ্ছে অনেকে। তারই মধ্যে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় আগ্রহ ধরে রাখতে চেষ্টা চলছে বহু স্কুলে। খোঁজ নিল আনন্দবাজার
হিঙ্গলগঞ্জ সার্কেলের সব প্রাথমিক স্কুলে যাতে রুটিন মেনে অনলাইন ক্লাস নেওয়া হয়, তার ব্যবস্থা হয়েছে। স্কুল পরিদর্শক দফতর সূত্রের খবর, এই সার্কেলে প্রাথমিক স্কুল ৬৯টি, উচ্চ প্রাথমিক ৯টি, হাইস্কুল ১৪টি। প্রাথমিকে পড়ুয়া ৬০৫৮ জন। উচ্চ প্রাথমিক ও হাইস্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৮৮৭১। হাইস্কুলগুলিতে শিক্ষকেরা অনেকেই উদ্যোগী হয়ে অনলাইন ক্লাস করছেন। তবে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলিতে অনলাইন ক্লাস করার চল খুব কম ছিল। হাতে গোনা কয়েকটি স্কুল নিজেদের মতো করে ক্লাস করছিল। সব পড়ুয়াকেও তাতে শামিল করা যায়নি।
হিঙ্গলগঞ্জ সার্কেলের স্কুল পরিদর্শক মহম্মদ নিজামুদ্দিন এই পরিস্থিতর পরিবর্তনে তৎপর হন। কয়েক মাস ধরে দফায় দফায় শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করে বিভিন্ন পরিকল্পনা করেন। সব প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে নিয়ম করে অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে এখন। সব প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে গড়ে ৩০-৩৫ শতাংশ পড়ুয়াকে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করা গিয়েছে বলে দফতর সূত্রের দাবি। এ ছাড়া, সব হাইস্কুলগুলিতে গড়ে ৪০-৪৫ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইন ক্লাস করছে। আরও পড়ুয়াকে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে কয়েকজন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষককে নিয়ে স্কুল পরিদর্শক ও সহ স্কুল পরিদর্শক অনলাইন ক্লাস তদারকির জন্য কমিটি তৈরি করেছেন। স্কুল পরিদর্শক প্রতি মাসে শিক্ষকদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করে বিস্তারিত রিপোর্ট নিচ্ছেন।
কী ভাবে গতি এল অনলাইন ক্লাসে? বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়াদের অনেকের বাড়িতে স্মার্টফোন নেই। তাই শিক্ষকেরা অভিভাবকদের এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে অনুরোধ করেছেন, যে পড়ুয়াদের ফোন নেই, তাঁর পাশের বাড়ির কারও ফোন থেকে যেন ক্লাস করার ব্যবস্থা করা যায়। এ ছাড়া, একজন পড়ুয়ার ফোন থেকে বাড়ির আশপাশের কয়েকজন সহপাঠী যাতে ক্লাস করতে পারে, সে বিষয়ে অভিভাবকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। এ ভাবে অনেক পড়ুয়াকে যুক্ত করা গিয়েছে। এখন বিভিন্ন স্কুলে সপ্তাহে ৩-৪ দিন ক্লাস নেওয়া হয় অনলাইনে।
গুগল মিটে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা প্রতিদিন দু’টি করে ক্লাস নিচ্ছেন। তার লিঙ্ক বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের মাধ্যমে পড়ুয়ারা পেয়ে যাচ্ছে।
সেরেরাটি এফপি স্কুলের শিক্ষক জয়ন্ত সেন বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা এখন থেকে নিজেদের স্কুলের শিক্ষকদের ক্লাস করার পাশাপাশি অন্য স্কুলের শিক্ষকদের ক্লাসও করতে পারবে। অর্থাৎ, সপ্তাহে ৭ দিনই চাইলে তারা ক্লাস করতে পারবে।” জয়ন্ত আরও বলেন, ‘‘অনলাইন ক্লাস ছাড়াও ছোট ছোট ভিডিয়ো করে হোয়াটস্যাপে পড়ুয়াদের কাছে পাঠানো হচ্ছে।’’
শিক্ষকেরা অনেকে জানালেন, ইউটিউব বা ফেসবুকের কোনও ভিডিয়ো লিঙ্ক দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, অন্য কিছুর প্রতি পড়ুয়ারা যাতে ঝুঁকে না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
মামুদপুর পশ্চিমপল্লি এফপি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তারকনাথ মাইতি বলেন, ‘‘স্কুলের ৯০ জন পড়ুয়ার মধ্যে এখন ৪৫ জন পড়ুয়া অনলাইন ক্লাস করছে। পড়ুয়া-অভিভাবকদের খুব উৎসাহ। অনেকের আগে ফোন না থাকলেও এখন ক্লাস করার জন্য কষ্ট করে হলেও কিনেছেন। কেউ কেউ ইন্টারনেটের খরচ কমাতে ২-৩ জন মিলে একটা ফোনে ক্লাস করছে।’’
বিশপুর পূর্বপল্লি এফপি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রিমা মাইতি বলে, ‘‘আগে ফোন ছিল না। তাই অনলাইন ক্লাস করতে পারতাম না। এক মাস হল বাবা ফোন কিনে দিয়েছে। ক্লাস করতে পারছি।” দক্ষিণ হিঙ্গলগঞ্জ জিএসএফপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুস্নাত দাস জানালেন, করোনা-আবহে ৩ জন পড়ুয়া অনলাইন ক্লাস করত। এখন ৮০ জনের মধ্যে ৩০ জন পড়ুয়া অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হয়েছে।
মামুদপুর গ্রামের এক অভিভাবক অলিভা ঘোষ বলেন, “আগে মোবাইলে শুধু খেলা নিয়ে থাকত মেয়ে। ক্লাস চালু হওয়ায় মেয়ের সময়টা ভাল কাটছে।’’
মহম্মদ নিজামুদ্দিনের মতে, হিঙ্গলগঞ্জের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় অনেকের অনেক রকম প্রতিবন্ধকতা আছে। অধিকাংশ দরিদ্র পরিবার। তবুও হাল না ছেড়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরও সুসংগঠিত ভাবে আরও বেশি সংখ্যক প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করা। তা না হলে গ্রামের পড়ুয়ারা স্কুলছুট হয়ে যাবে, অনেক পিছিয়ে পড়বে।”