কাঠামো: সবেমাত্র বাঁধা হয়েছে খড়। মাটি নিয়ে এ বার চিন্তা। নিজস্ব চিত্র
রথের দিন থেকে শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজোর তোড়জোড়। আসতে শুরু করে নতুন বায়না। একে তো জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে ফি বছর। এ বছর তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মাটির সমস্যা। ফলে চিন্তিত বসিরহাটের মৃৎশিল্পীরা।
শিল্পীরা মাটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাটি কিনতেন। এখন রাজ্য সরকারের কড়া নির্দেশে মাটি বিক্রি বন্ধ আছে। পুলিশ-প্রশাসনের ভয়ে কেউ মাটি বিক্রি করতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে প্রতিমা গড়বেন, তা নিয়ে চিন্তিত মৃৎশিল্পীরা। ইতিমধ্যে দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু মাটির অভাবে অনেকেই ঠিক করেছেন, গত বছরের থেকে কম প্রতিমা গড়বেন। আপাতত কাঠামোটুকু গড়ে রেখেছেন অনেকে। শিল্পীরা জানালেন, এতদিন মাটি জোগাড় করতে তেমন অসুবিধা হত না। তবে এখন ধরপাকড় শুরু হওয়ায় মাটি মিলছে না।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট এবং দেগঙ্গায় অন্তত পাঁচ হাজার মণ্ডপে দুর্গাপুজো হয়। গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিমা শিল্পীদের ঘরেই থেকে গিয়েছিল। ফের করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। একে মাটির চিন্তা, তার উপরে করোনা বাড়তে থাকায় চিন্তিত শিল্পীদের অনেকে।
বসিরহাটের শিল্পী কেনা পাল বলেন, ‘‘এ বছরও করোনা বাড়ছে। দাম বাড়লে আদৌ প্রতিমা বিক্রি হবে কি না, তা চিন্তার বিষয়। বিকল্প পথ কী হবে, বুঝতে পারছি না।’’ দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুরের মৃৎশিল্পী সুদিন পাল বলেন, “মাঠের মাটিতেই প্রতিমা ভাল হয়। আগে ১০-১২টি প্রতিমা তৈরি করতাম। সে জন্য আমার দু’গাড়ি মাটি লাগত। এখন এক গাড়ির বেশি মাটি পাচ্ছি না। মাঠের মাটি না পেয়ে চড়া দামে বিদ্যাধরী খালের মাটি কিনতে হচ্ছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো মাটি কাটা বন্ধ থাকায় সেটাও ঠিক মতো পাচ্ছি না।’’ শিল্পী দীপক পালের কথায়, ‘‘রোজগারের আশায় সারা বছর দুর্গাপুজোর দিকে চেয়ে থাকতে হয়। পনেরো-কুড়িটা প্রতিমা না করলে চলে না। এই পরিস্থিতিতে প্রতিমার দাম যে বাড়াবো, তারও উপায় নেই। দাম বেশি হলে বেচা-কেনার পরিস্থিতি কেমন হবে তার কোনও ঠিক নেই।’’
শুধু মাটি নয়, কারিগর এবং শ্রমিক নিয়েও চিন্তায় আছেন মৃৎশিল্পীরা। গত দু’বছর লকডাউনের জন্য শ্রমিকেরা প্রায় সকলে বসে ছিলেন। এখন তাঁরা কাজের খোঁজে অনেকেই ভিন্রাজ্যে চলে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কারিগর ও শ্রমিকের সমস্যা দেখা দিয়েছে।