Man kills Wife and Daughter

কন্যাসন্তান জন্মের জের, স্ত্রী এবং সন্তানকে দা দিয়ে কুপিয়ে খুন বাবার, পরে হাবড়া থানায় আত্মসমর্পণ

স্ত্রী কেন কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তা নিয়ে মৌসুমীর উপর অত্যাচার চালাতেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। শেষ পর্যন্ত মেয়ের জন্মদিনের ঠিক পরের দিন স্বামীর হাতে খুন হলেন স্ত্রী, কন্যা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৫৯
Share:

— প্রতীকী ছবি।

পণের দাবিতে অত্যাচার চলছিলই, তার মধ্যে স্ত্রী জন্ম দেন এক কন্যাসন্তানের। তাতে যেন ঘৃতাহুতি পড়ে। শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারে মাত্রা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত স্বামী খুন করলেন স্ত্রী এবং আট বছরের সন্তানকে। তার পর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের বাদুড়িয়া থানার রামচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের খাসপুর গ্রামে।

Advertisement

বছর আষ্টেক আগে খাসপুরের সন্দীপের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মৌসুমীর। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীতে বনিবনা ছিল না। পণের দাবি নিয়ে মৌসুমীকে নিত্য শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের মুখে পড়তে হত। এরই মধ্যে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মৌসুমী। এতে গোলমাল থামার পরিবর্তে আরও বেড়ে যায়। যে গোলমালে পাকাপাকি ভাবে দাঁড়ি পড়ল মৌসুমী এবং আট বছরের কন্যাসন্তান সৌমিলির মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার কাকভোরে বছর ৩৫-এর সন্দীপ একটি দা দিয়ে ঘুমন্ত স্ত্রী এবং সন্তানকে কোপান। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর নিজেই হাবড়া থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। হাবড়া থেকে খবর যায় বাদুড়িয়া থানায়। পুলিশ সন্দীপের বাড়ি থেকে মৌসুমী এবং তাঁদের আট বছরের মেয়ের দেহ উদ্ধার করে। দেহ দু’টি পাঠানো হয় বাদুড়িয়ার রুদ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। এই ঘটনায় সন্দীপের পাশাপাশি, মৌসুমীর শ্বশুর এবং শাশুড়িকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, মঙ্গলবার সন্দীপ এবং মৌসুমীর মেয়ে সৌমিলির আট বছরের জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর রাতে মা-বাবার সঙ্গে ঘুমোতে যায় সৌমিলি। কিন্তু সেই ঘুম আর ভাঙেনি।

Advertisement

সৌমিলির দাদু তথা মৌসুমীর বাবা সুবল পাল বলছেন, ‘‘পণের দাবিতে বিয়ের পর থেকেই মেয়ের উপর অত্যাচার চলত। কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর তার মাত্রা কয়েক পাল্লা বৃদ্ধি পায়। আমরা কত বার মেয়েকে ফিরে আসতে বলেছি, কিন্তু ও কোনও কথা শোনেনি। বললেই বলত, বাবা, সময় দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা আর হল না। আমি সন্দীপের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ওর বাড়ির লোকও এতে যুক্ত।’’

ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে হাবড়া এবং বাদুড়িয়া থানার পুলিশ। পণ এবং কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ ভারতে এখনও বহু মহিলার মৃত্যু হয়। শিক্ষার প্রসার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও যে এই ধরনের পৈশাচিক মানসিকতা আমাদের মনে অটুট, বাদুড়িয়ার ঘটনা তা-ই আরও এক বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement