যানজট মুক্ত শহর চান বনগাঁর বধূরা

গত পাঁচ বছরে বনগাঁ শহরের সামগ্রিক কিছু উন্নয়ন যে হয়েছে, তা একবাক্যে স্বীকার করেন শহরের বাসিন্দারা। তবে সকলেরই আপেক্ষ থেকে গিয়েছে তাঁদের প্রিয় সীমান্ত শহরের যানজট সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলায়। পথে বেড়িয়ে যানজটে পড়ে নাকাল হওয়াটা শহরবাসীর কাছে নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের বধূরাও ঘরকন্না সামলে বাইরের কাজে বেরিয়ে সমস্যায় পড়ছেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৮
Share:

গত পাঁচ বছরে বনগাঁ শহরের সামগ্রিক কিছু উন্নয়ন যে হয়েছে, তা একবাক্যে স্বীকার করেন শহরের বাসিন্দারা। তবে সকলেরই আপেক্ষ থেকে গিয়েছে তাঁদের প্রিয় সীমান্ত শহরের যানজট সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলায়। পথে বেড়িয়ে যানজটে পড়ে নাকাল হওয়াটা শহরবাসীর কাছে নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের বধূরাও ঘরকন্না সামলে বাইরের কাজে বেরিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। রাস্তার উপরে যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে অটো, ম্যাজিক ভ্যান, বাস ও টোটোর স্ট্যান্ড। গাড়ি বাড়লেও নতুন রাস্তা বাড়েনি। রাস্তা চওড়াও হয়নি। তার উপরে শহরের মধ্যে দিয়ে পেট্রাপোল সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাকের সারি যাতায়াত করে। যশোর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কেও যাতায়াতে সমস্যায় পড়েন নাগরিকেরা। বাম আমলে কেন্দ্রের তরফে একবার যশোর রোডের বিকল্প রাস্তা তৈরির উদ্যোগ করা হয়েছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতায় সেই প্রকল্প আর বাস্তবায়িত হয়নি। গৃহবধূরা চান, যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরি করা হোক।

Advertisement

বনগাঁর বধূদের চোখে অবশ্য শহরের উন্নয়নও ধরা পড়েছে। শহরের একমাত্র শ্মশানটি স্থানীয় খয়রামারি এলাকায়। যার নাম ভূপেন্দ্রনাথ শেঠ মহাশ্মশান। কয়েক বছর আগেও শ্মশানটির পরিকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না। বর্ষায় শ্মশান চত্বর জলমগ্ন হয়ে পড়ত। পাশের ইছামতী নদীর জলও ঢুকে পড়ত। বৃষ্টির সময় দাহ করার কাজ বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে শ্মশানটির পরিকাঠামো নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। বসেছে বৈদ্যুতিক চুল্লিও। মানুষ এখন সময় কাটাতেও শ্মশান চত্বরে গিয়ে ঘুরে আসেন। এ ছাড়া বধূরা জানালেন, ত্রিকোণ পার্ক এলাকা সাজানো হয়েছে। মনীষীদের মূর্তি বসানো হয়েছে। ঝর্না বসানো হয়েছে। এলাকার চেহারা পাল্টে গিয়েছে। অল্পমূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্যদীপ। বিনা বেতনে পড়ুয়াদের পড়ানোর জন্য তৈরি হয়েছে শিক্ষাকেন্দ্র। নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট টিভি ক্যামেরা। তৈরি হয়েছে পানীয় জলের রিজার্ভার। তবে এখনও পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। প্রতিটি ওয়ার্ডে সমান ভাবে উন্নয়ন হয়নি। কোথাও কোথাও এখনও রাস্তা বেহাল। আলো নেই।

শহরের পশ্চিমপাড়া এলাকায় বাসিন্দা সঞ্চারী দে। পেশায় বুটিক শিল্পী। ছোটবেলা থেকেই শহরটাকে দেখছেন। সঞ্চারীদেবী বললেন, ‘‘নতুন পুরভবন হয়েছে, শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসেছে, স্বাস্থ্যদীপ তৈরি হয়েছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আজও সমস্যা মেটেনি। যানজটের সমস্যাও বাড়ছে।’’ তবে শহরকে ঘিরে তাঁর কিছু প্রত্যাশা রয়েছে। সঞ্চারীদেবীর কথায়, ‘‘বনগাঁ থেকে নানা প্রয়োজনে মানুষ কলকাতায় যান। সেখানে তাদের থাকার খুবই অসুবিধা। পুর কর্তৃপক্ষ যদি কলকাতায় ‘বনগাঁ ভবন’ নামে একটি অতিথিশালা তৈরি করেন, তা হলে শহরবাসী উপকৃত হবেন।’’ পাশাপাশি তাঁর আরও কয়েকটি চাহিদা রয়েছে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। তিনি চান পুরসভা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে আরও বেশি করে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিক। পুরসভার অধীনে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তৈরি হোক। তা ছাড়া, পুরসভা একশো শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল তৈরি করুক। পাড়ার মোড়ে মোড়ে টোটোর স্ট্যান্ড তৈরি হোক।

Advertisement

বনগাঁর জয়পুর এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ রেবেনাস ইসলাম। রেবেনাস জানালেন তাঁর প্রাপ্তির কথা। শহরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে শুরু হয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা অডিটোরিয়াম তৈরির কাজ। শ্মশানে বসেছে বৈদ্যুতিক চুল্লি। শহরটা আলোয় সাজানো হয়েছে। বেশির ভাগ রাস্তাই ভাল। তবে যানজটের সমস্যা না মেটায় তাঁর প্রত্যাশা সম্পূর্ণ পূরণ হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘যানজট সমস্যা মেটাতে দ্রুত একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরি করা হোক।’’ রেবেনাস জানালেন, নতুন সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে তীব্র শব্দ দূষণ। নানা কারণে শহর জুড়ে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো হয়। তিননি মনে করেন, পুর কর্তৃপক্ষের উচিত কড়া হাতে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা।

শহরের নেতাজি মার্কেট এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা পদ্মাবতী মণ্ডল। পদ্মাবতীদেবীর প্রত্যাশা, শুধুমাত্র শিশুদের জন্য শহরে একটি খেলার মাঠ তৈরি হোক। যেখানে ইনডোর ও আউটডোর গেমসের ব্যবস্থা থাকবে। কারণে-অকারণে মাইক বাজানোর প্রবণতা বন্ধ হোক, এটাও চান তিনি। স্বাস্থ্যদীপের পরিষেবা আরও বাড়ুক, নিকাশি নালা নিয়ম করে আবর্জনা মুক্ত করা হোক, এমন দাবিও আছে তাঁর। কিন্তু যানজট সমস্যার সুরাহা করা যে সকলের আগে দরকার, সেটাও মনে করেন পদ্মাবতী।

শক্তিগড় এলাকার বধূ রীতা তরফদার। তাঁর মেয়ে দীপান্বিতা পড়ে একাদশ শ্রেণিতে। ছেলে হিমেশ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। রোজ তিনি ছেলে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যান। নিয়েও আসেন। এ ছাড়া তাদের নিয়ে গৃহশিক্ষকের বাড়িতে আসতে-যেতে হয়। যানজট নিয়ে তিনিও সরব। বললেন, ‘‘একেক সময় রাস্তা পারাপার করাটাই কঠিন হয়ে পড়ে। দশ মিনিটের পথ পেরোতে বিশ মিনিট লেগে যায়। আমি চাই যানজটের সমস্যা দ্রুত মিটুক।’’ নিকাশির সমস্যার কথাও উল্লেখ করলেন তিনি। বাড়ি থেকে ময়লা নিতে পুরসভার গাড়ি অনিয়মিত আসে বলেও জানালেন।

খয়রামারি এলাকার আইসিডিএস কর্মী সীমা পাল। তাঁর অভিজ্ঞতায়, নিকাশির হাল বেশ খারাপ। যানজট সমস্যাও প্রতিদিন মাথা ব্যথার কারণ তাঁর। একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন তিনি। পাড়ায় পাড়ায় ডাস্টবিন বসানো উচিত বলেও মনে করেন।

রেটপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ অঞ্জলি দাস। সুযোগ পেলেই কেনাকাটা করতে ভালবাসেন। অঞ্জলিদেবীর আক্ষেপ, ‘‘শহরে কোনও শপিং মল নেই। ভাল কিছু কিনতে হলেই কলকাতায় দৌড়তে হয়। পুরসভা মল তৈরির জন্য তব্দির করে, তবে বেশ ভাল। শহরে গাড়ি নিয়ে বের হলে পার্কিংয়ের জায়গা পেতেও সমস্যা হয় বলে জানালেন তিনি। যানজট সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে রাস্তার চারপাশ আরও সুন্দর করে সাজানো উচিত পুরসভার, বললেন অঞ্জলি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement