Coronavirus Lockdown

কোনও মতে বাস, মেলেনি ত্রিপলটুকুও

আমপানের নদী বাঁধ ভেঙে  প্লাবিত হয়েছে এলাকা। তাতে নোনা জল ঢুকে প্রায় ১০০ বিঘার বেশি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

রায়দিঘি শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ০৪:৩৩
Share:

এ ভাবেই চলছে সংসার। নিজস্ব চিত্র

খোলা আকাশের নীচে রান্না করছেন রাধাকান্তপুর গ্রামের সাবিত্রী হালদার। আমপানের ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে ঘর। প্রতিবন্ধী স্বামী কোনও রকমে ঘর মেরামত করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের অভিযোগ, সরকার থেকে খাবার তো মেলেনি। পঞ্চায়েতে একাধিকবার গিয়েও জোগাড় করতে পারেননি ত্রিপল। একটি পলিথিন কিনে কোনও রকমে ছাউনি দিয়ে রয়েছেন।

Advertisement

শুধু ওই দম্পতি নয়। রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের রাধাকান্তপুর পঞ্চায়েতের অধিকাংশ পরিবারই ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্লকের রাধাকান্তপুর পঞ্চায়েতটি সিপিএমের দখলে রয়েছে। ১৪টি বুথের জনসংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, ওই পঞ্চায়েতে সরকার যথেষ্ট ত্রাণ দেয়নি। তাই এলাকার মানুষকেও খাবার ও ত্রিপল দিতে পারেননি তাঁরা।

রায়দিঘির মথুরাপুর ২ বিডিও রিজওয়ান আহমেদ বলেন, ‘‘সকলেই সরকারি সাহায্যের ত্রিপল পেয়েছেন। কেউ না পেয়ে থাকলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সরকারি সাহায্যে ২০ হাজার টাকা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

আমপানের নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে এলাকা। তাতে নোনা জল ঢুকে প্রায় ১০০ বিঘার বেশি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রকৃতিক দুর্যোগের ফলে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে ২৫৫৬টি ঘর। আংশিক ভেঙে পড়েছে প্রায় ১ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি।

রাধাকান্তপুর সর্দার পাড়ার বাসিন্দা পুষ্প সর্দার, প্রবোধ সর্দার, মালা সর্দারেরা জানান, আমপানের আগের দিন স্থানীয় স্কুলে ত্রাণ শিবিরে উঠেছিলেন তাঁরা। সেখানে দু’দিন কাটিয়ে ফিরে দেখেন মাটির দেওয়ালের খড়ের ছাউনির বাড়ি তছনছ হয়ে গিয়েছে। কোনও ভাবে ধার দেনা করে ভাঙা বাড়ি অস্থায়ী ভাবে সারিয়ে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন এলাকার মানুষ। তাঁদের কথায়, ‘‘দুর্যোগের পর আমরা শুনেছিলাম পঞ্চায়েত থেকে ত্রিপল, খাবার ও ঘর ভেঙে যাওয়ার জন্য ২০ হাজার করে টাকা সাহায্য করবে সরকার। তাই কয়েক দিন পঞ্চায়েতে গিয়েছিলাম। কিন্তু খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এখন না খেয়েই দিন কাটাতে হয়।’’

ত্রাণ-সহ সরকারি সাহায্যের দাবিতে পঞ্চায়েত ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। তৃণমূলের কর্মী সংকীর্তণ শিকারির অভিযোগ, এই পঞ্চায়েতে স্বজনপোষণ করা হচ্ছে। বেছে বেছে সিপিএমের সমর্থকদের সরকারি ত্রিপল ও অন্য সাহায্যে করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘এর প্রতিবাদে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি যাতে সরকারি সাহায্য পায়, সেই দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম।’’

ওই পঞ্চায়েতে সিপিএমের প্রধান চম্পা বৈদ্য বলেন, ‘‘এত মানুষের ঘর ক্ষতি হয়েছে। অথচ আমরা মাত্র হাজারখানেক ত্রিপল পেয়েছি। সবাই ত্রিপল চাইতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।’’ তিনি জানান, আর্থিক সাহায্য যে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়েছে, সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নামের তালিকা ব্লক প্রশাসন থেকে চেয়ে পাঠিয়েছিল। তাই প্রতিটি বুথে সর্বদলীয় ভাবে ৬ জনকে নিয়ে কমিটি করে তালিকা করে এখনও পর্যন্ত ২৮০ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। প্রধানের দাবি, এখানে স্বজনপোষণের প্রশ্নই ওঠে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement