সম্মান: তৈরি হয়েছে লোগো
চটুল হিন্দি গান নয়। বরং শিউলির গন্ধ-মাখা বাতাসে কোথাও ‘অলির কথা শুনে’, কোথাও ‘রানার রানার’, কোথাও-বা ‘সুরের আকাশে’র সুর-তাল।
শারদীয়ার সপ্তমীতে এ বার এ রকম নানা রঙের হেমন্ত-গানে মেতে উঠবে জয়নগর। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষে শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে এ ভাবেই কোমর বাঁধছে শিল্পীর ছোটবেলার এলাকা। ঘরের ছেলেকে এ ভাবে সম্মান জানানো হবে শুনে খুশি হেমন্তের গ্রাম বহড়ুও।
সম্প্রতি জয়নগর এলাকার পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে হেমন্তকে শ্রদ্ধা জানাতে সপ্তমীতে মণ্ডপগুলিতে দিনভর হেমন্তের গান বাজানোর আবেদন করেন জয়নগর থানার আইসি অতনু সাঁতরা। বৈঠকে উপস্থিত ১০৩টি পুজো কমিটির প্রত্যেকেই এক বাক্যে সম্মতি জানিয়েছেন প্রস্তাবে। বহড়ুর বড় পুজো কমিটিগুলির উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁদের প্যান্ডেলে সপ্তমীতে দিনভর হেমন্তের গানই বাজবে। দিনের কোন সময়ে কী গান বাজানো হবে, তা নিয়ে পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছে কোনও কোনও পুজো কমিটিতে।
বহড়ুতেই হেমন্তের পৈতৃক বাড়ি। ছোটবেলায় বেশ কয়েকটি বছর এখানেই কাটান গায়ক। বহড়ু উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনাও করেন। পরবর্তী কালে ছেলেকে নিয়ে পাকাপাকি ভাবে কলকাতায় চলে যান হেমন্তের মা-বাবা। এখন অবশ্য হেমন্তের পৈতৃক বাড়ির কিছুই অবশিষ্ট নেই।
তবে আশপাশে এখনও বসবাস করেন মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যেরা। গান বাজানোর কথা শুনে উচ্ছ্বসিত তাঁরা। হেমন্তের ভাইপো খোকন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ রকম কিছু হলে তো খুবই ভাল।’’ খুশি খোকনের মা অশীতিপর গায়ত্রী মুখোপাধ্যায়। বিয়ের পর থেকে ভাসুরের কথা অনেক শুনেছেন। বহড়ুতে অনুষ্ঠান করতে আসা হেমন্তকে দেখেওছেন দু’একবার। গায়ত্রী বলেন, ‘‘এত দিনে তবু মানুষটার কথা ভেবে কিছু একটা হচ্ছে এলাকায়।’’
হেমন্তের পৈতৃক ভিটের পাশেই থাকেন পেশায় শিক্ষক হোসেন আলি শাহ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই প্রশাসনকে প্রস্তাব দিচ্ছি, হেমন্তের স্মরণে প্রশাসনের তরফে একটা মূর্তি অন্তত বসানো হোক এখানে। এ জন্য জায়গা দিতেও আমি প্রস্তুত। কিন্তু কেউ কোনও উদ্যোগ করেনি। থানা থেকে যে এ রকম একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য।’’ স্থানীয় আইনজীবী অসিত নাইয়া বলেন, ‘‘ঘরের ছেলেকে সম্মান জানানোর এর থেকে ভাল উপায় আর কী হতে পারে?’’
বহড়ুর স্থানীয় কিছু বাসিন্দা মিলে তৈরি করেছেন ‘হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বার্থ সেন্টিনারি সেলিব্রেশন কমিটি’। গায়কের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের ক্ষেত্রে বছরভর এই কমিটির নানা পরিকল্পনা রয়েছে।
কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ভবানী সরকারের কথায়, ‘‘কমিটির তরফে হেমন্তের জন্ম শতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা ভাবে চেষ্টা করছি আমরা। কিছু পরিকল্পনাও করা হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশের তরফে এমন একটা প্রস্তাব এসেছে। নিঃসন্দেহে অভিনব ব্যাপার হবে।’’
আর গোটা পরিকল্পনা যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, জয়নগর থানার সেই আইসি অতনু সাঁতরার কথায়, ‘‘জন্মশতবর্ষে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানাতেই পুজো কমিটিগুলির কাছে প্রস্তাবটা দিই। সকলে সম্মতি জানিয়েছেন। একটা সময়ে তো পুজোর গানে গোটা বাংলা মাতিয়েছেন হেমন্ত। আজ সেই পুজোতেই গানে গানে তাঁকে সম্মান জানাতে পারব, এটা ভেবে ভাল লাগছে।’’