জলমগ্ন: রাস্তার উপরে মাছ ধরছেন মানুষ। ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজারে। ছবি: সামসুল হুদা
বজ্রবিদ্যুৎ-সহ প্রবল বৃষ্টি চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়াও বইছে। জেলা প্রশাসনের তরফে ভাঙড় ১, ২, ক্যানিং ২, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার-সহ জেলার ১০টি ব্লক ও বজবজ ২, ঠাকুরপুকুর, মহেশতলা-সহ চারটি পুর এলাকা অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট, চাষের জমি জলে ডুবে গিয়েছে। জলে ভাসছে ধান, আনাজ, মাছ চাষের পুকুর।
ক্যানিং মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ক্যানিংয়ের দিঘিরপাড় পঞ্চায়েত, মাতলা ১, মাতলা ২ পঞ্চায়েতের বহু জায়গা জলমগ্ন। বারুইপুর-ক্যানিং রোডেরও বেশ কিছুটা অংশে জল জমে রয়েছে। বাসন্তী ব্লকেরও অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে ভরা বাসন্তী রাজ্য সড়কের বহু জায়গাতেই জল জমে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জল জমেছে গোসাবা ব্লকের বিভিন্ন এলাকায়।
টানা বৃষ্টিতে ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপ মহকুমার নিচু এলাকায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কাকদ্বীপের বিভিন্ন রাস্তাঘাট জলমগ্ন। জল ঢুকে গিয়েছে বাড়ির ভিতরেও। কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতাল চত্বর, ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের কিছু এলাকা জলে ডুবে রয়েছে। ডায়মন্ড হারবার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বরেও জল জমেছে। পুর এলাকার কয়েকটি ওর্য়াডে রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কোনও কোনও ওয়ার্ডে বাড়ির মধ্যেও জল ঢুকেছে।
বাঁধ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বাসন্তীর চুনাখালিতে নদী বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের তরফে তা দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু নদীবাঁধের মাটিতে ধস নেমেছে। অতিবৃষ্টির পাশাপাশি পূর্ণিমার ভরা কটালের জন্য নদীতে অতিরিক্ত জল রয়েছে। এর জেরেই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলেই জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
সাগরে বৃষ্টির সঙ্গেই কিছুক্ষণের জন্য আছড়ে পড়ে মিনি টর্নেডো। ফলে একাধিক কটেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ইতিমধ্যে জেলার ৯,৮২৫ জন মানুষকে ৬৮টি ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২২টি ‘কমিউনিটি কিচেন’ খোলা হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ ও বিডিওদের সাহায্যে রান্না খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত জেলায় ৩৭টি মাটির বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। ৪১৯টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলাসদর দফতর, মহকুমাশাসকের দফতর ও ব্লক প্রশাসনের দফতরে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
এদিন ভাঙড়ের জলমগ্ন খড়ম্বা, মরিচা লেবুতলা, চড়িশ্বর এলাকায় আসেন সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে শুকনো খাবার, ত্রিপল তুলে দেন।
জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে এসেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ত্রিপল বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করে পরিস্থিতির উপরে নজর রেখেছি।”